রাজধানীর তেজগাঁও এবং হাতিরঝিল এলাকায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দেওয়া ৪৩৫ প্লটের যাবতীয় নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এসব প্লটের নকশা এবং বর্তমান অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করে ছবিসহ প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছে।

বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি একেএম রবিউল হাসানের বেঞ্চ আজ বুধবার এ আদেশ দেন। আদেশে ৪ সপ্তাহের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্লট বরাদ্দের যাবতীয় নথি ও সরেজমিন প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আদালতে জনস্বার্থে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে প্লটগ্রহীতার পক্ষে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, আইনজীবী মোশারফ হোসেন সরদার ও আব্দুল আলীম এবং রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল খন্দকার নজরুল ইসলাম শুনানি করেন।

২০১২ সালে দৈনিক সমকালে 'রাস্তাকে প্লট বানিয়ে ভাগাভাগি' এবং অপর একটি জাতীয় দৈনিকে 'সড়ক প্রকল্প রাতারাতি হয়ে গেল শিল্পপ্লট' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধভাবে দুই শতাধিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নিয়মনীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করেই ১৯৫০ সাল থেকে এসব প্লট বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয়। ওই এলাকায় ২০১১ সাল পর্যন্ত সরকারের শত শত বিঘা জমি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাজারদরের চেয়ে কম মূল্যে ব্যক্তিবিশেষ বা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে।

ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ২০১২ সালে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রুল জারি করেন। তখন প্লটের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়া ও তাঁর ছেলে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী নাজমা ইসলামকে এবং পরে যায়যায়দিন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমানকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

প্লট জালিয়াতি নিয়ে এ ঘটনা তখন বহুল আলোচিত হয়েছিল। সরকারও পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। তাঁরা তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দেন। ৩৯৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে প্রভাবশালীদের দখলে থাকা দুই শতাধিক প্লট বরাদ্দ বাতিলের সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। কিন্তু পরে তদন্ত প্রতিবেদনসহ মামলার নথি কয়েক দফা গায়েব হয়ে যায়।

এ পর্যায়ে এই মামলায় জনস্বার্থে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) পক্ষভুক্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন পর আজ রুলের শুনানিতে প্লট বরাদ্দের যাবতীয় নথি তলবের আদেশ দেন হাইকোর্ট।