- সারাদেশ
- আইনজীবীদের বিরুদ্ধে প্রিজনভ্যানে হাজতিদের শ্লোগান
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত
আইনজীবীদের বিরুদ্ধে প্রিজনভ্যানে হাজতিদের শ্লোগান

ফাইল ছবি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির আদালত বর্জনে বিচারপ্রার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এতে সেবা বঞ্চিত হয়ে ক্ষুব্ধ বিচারপ্রার্থীরা জেলহাজত থেকে প্রিজনভ্যানে করে আদালতের আসার সময় আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ফটকে ও হাজতখানায় এ ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে আইনজীবীদের আদালতের বর্জনের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারিক কার্যক্রম চলেছে।
জানা যায়, তিন দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত আইনজীবীরা দুটি ছাড়া বাকি আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেন। গত বুধবার থেকে আইনজীবীরা সব আদালত বর্জন করেন। এতে আদালতে অচলাবস্থা চরম আকার ধারণ করে। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী। বৃহস্পতিবার সকালে জেলা কারাগার থেকে বিভিন্ন মামলার ৬৯ হাজতিকে প্রিজনভ্যানে করে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয় ।
এ সময় সকাল পৌনে ১০টায় তাদের প্রিজনভ্যান থেকে নামানোর সময় ক্ষুব্ধ বিচারপ্রত্যাশী হাজতিরা আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আপত্তিজনক শ্লোগান দেন। তাদের স্বজনদের দাবি, আইনজীবীরা কোর্ট বর্জন না করলে তাদের অনেকের জামিন হয়ে যেত।
আদালতে দায়িত্বরত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা প্রিজনভ্যানের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে হাজতিদের শ্লোগান দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিকেলে সব হাজতিকে কারাগারে নেওয়ার সময়ও একইভাবে অকথ্য ভাষায় আইনজীবীদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে দেখা যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কান্দিপাড়ার বাসিন্দা দেলোয়ার মিয়ার স্ত্রী লতা বেগম আদালতে এসেছেন গ্রেপ্তার স্বামীকে জামিন করানোর জন্য। তিনি জানান, গত ১৮ জানুয়ারি দেলোয়ারকে পুলিশ আটক করে মাদকের মামলা দিয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) ধার্য তারিখে আন্দোলনের কারণে আইনজীবী নিয়োগ দিতে না পারায় জামিনের আবেদন করা সম্ভব হয়নি।
সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের উত্তর সুহিলপুর পুর গ্রামের হাছিনা বেগম জানান, তার কিশোর ছেলে মিথ্যা ডাকাতির মামলায় জেলা কারাগারে রয়েছে। কোর্টে এলেও ছেলের জামিন করাতে না পেরে হতাশ তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার গৃহকর্মী মাজেদা বেগম আদালতে এসেছিলেন দেড়মাস ধরে হাজতে থাকা ছেলে রামিমের জামিন করানোর জন্য। শুধু তাদেরই নয় এমন কয়েক হাজার বিচারপ্রার্থী নারী-পুরুষ আদালতের অচলাবস্থার কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে ফিরতে হয়েছে। আদালত বর্জনের কথা বিচারপ্রত্যাশীদের আগে না জানানোয় তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
এদিকে গত ১ জানুয়ারি থেকে আইনজীবীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন করেন। বৃহস্পতিবার আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতেই তাঁর আদালতের বিচারিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইনজীবীদের বর্জনকালিন এ আদালত থেকে বিভিন্ন মামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ২৮ জন জামিন পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার এ আদালতে দুটি মামলায় ৭ জন জামিন পান। এ সময় দুটি মামলা নিষ্পত্তি করা হয় বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান চৌধুরী কানন জানান, আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
হাজতিদের শ্লোগান বিষয়ে তিনি বলেন, বেঞ্চ সহকারীরা আইনজীবীদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তাদের ভুল বোঝানো হয়েছে। এভাবে মামলা পরিচালনা করায় অনেকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। বেইল বন্ড ছাড়া, কোর্ট ফি ছাড়া জামিন আবেদন শুনানিসহ বিভিন্ন বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আইনজীবী ছাড়া মামলা পরিচালনার বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান, আইনজীবী ছাড়া বিচারপ্রার্থীরা আদালতে আসতে পারেন, নিজেরাই শুনানি করতে পারেন। নিয়ম অনুযায়ী আদালত চলছে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ তিনটি মামলা দাখিল নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিচারকের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান আইনজীবীরা। এর জেরে ১ জানুয়ারি থেকে ওই আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা। পরবর্তীতে আইনজীবীরা সব আদালত বর্জন করেন। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে আইনজীবীরা জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ ছাড়া সব কোর্টের কার্যক্রমে অংশ নেন। ৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় পরের দিন থেকে পুনরায় সব আদালত বর্জন করন আইনজীবীরা।
মন্তব্য করুন