কয়েকটি পিতলের পাত্রে ভরা 'ধনদৌলত'। সেগুলো পাহারা দিচ্ছে দুটি সাপ। লোভে কেউ হাত বাড়ালে আর রক্ষা নেই। আছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ধাতব মুদ্রাসহ ১৭৬ দেশের মুদ্রা, ১৩০ বছর আগের কাঠের খড়ম, ১৭০ বছর আগের কাঠের ঢেঁকি, ১৯০ বছর আগের রুপার তৈরি বিছাসহ প্রায় দুই হাজার প্রাচীন নিদর্শন। রয়েছে অনেক দুর্লভ বস্তু।
এগুলো জাতীয় কোনো সংগ্রহশালায় রাখা বস্তু নয়। এসব দেখা যাবে 'প্রীতম-প্রীয়ান্তী' সংগ্রহশালায়। শখের বসে সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন আবুল কালাম আজাদ তালুকদার। নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় তালুকদার পাড়ায় নিজের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন সংগ্রহশালাটি।
দর্শনার্থীর জন্য প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে সংগ্রহশালাটি। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার দূরের পর্যটক এলে খুলে দেওয়া হয়। যেহেতু সংগ্রহশালাটি বাসায়, তাই প্রতিদিন খোলা রাখা সম্ভব হয় না। শুক্রবার প্রায় ২০০ দর্শনার্থী আসেন।
পৌর শহর থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সংগ্রহশালাটি। বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, আজাদের বাড়ির একটি ঘরের তিনটি কক্ষে জায়গা হয়েছে এসব সংগ্রহের। ঘর ছাড়াও লম্বা বারান্দায় সাজানো রয়েছে নিদর্শনগুলো। কক্ষে ঢুকতেই দেখা গেল রত্নভান্ডারটি। প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি চিড়িয়াখানা, পোকামাকড়ের ঘরবসতি, ২ টাকার নোট দিয়ে তৈরি পোশাক, কাঁসা-পিতল, কড়ি, ঝিনুক ও হাতির দাঁতের শোপিস দেখা গেল।
সংগ্রহশালা দেখতে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা থেকে এসেছেন কয়েকজন। তাঁদের একজন শাহজাদপুর সরকারি কলেজের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র শুভ। তিনি বলেন, 'স্থানীয় লোকের মুখে শুনেই আমরা এখানে এসেছি। সংগ্রহ দেখে অনেক কিছুই জানা হয়েছে।'
আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রায় ২৭ বছর ধরে এসব সংগ্রহ করছেন। শুরুর দিকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তাঁর স্ত্রী জেসমীন সুলতানা এ কাজে সহযোগিতা করছেন। দেশ ও বিদেশের এসব বস্তু সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সংগ্রহশালাটি সমৃদ্ধ করতে কাজ চলছে।
১৯৯৪ সাল। এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন আজাদ। অফুরন্ত সময়। সচ্ছল পরিবার। এক আত্মীয়র বাসায় ঘুরতে যান। সেখানে তিনি দেখেন হাতির দাঁত, যেটা বংশপরম্পরায় সংগ্রহ করেছিলেন। সেই থেকে সংগ্রহ শুরু।
আজাদের বাবা আয়নাল হক তালুকদার বলেন, 'আমরা সবাই আজাদকে পাগল বলতাম। অনেক টাকা খরচ করে এমন কাজ কে করে? এখন আজাদের এ সংগ্রহশালা নিয়ে আমরা গর্ব করি।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে সংগ্রহশালা গড়ে তোলার জন্য তাকে ধন্যবাদ।