আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদীর রামচন্দ্রদী গ্রামে ৬ ফেব্রুয়ারি চুরির অপবাদে তিন শিশুকে বেঁধে নির্যাতন ও চুল কেটে দেওয়ার মামলার মূল অভিযুক্ত পৌর মেয়র হালিম শিকদারকে এখনও গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

মামলার পর থেকেই মেয়র হালিমকে পলাতক বলছে পুলিশ। অথচ গতকাল বৃহস্পতিবারও হালিম শিকদারকে দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জ আদালতে নিজের আইনজীবী ফজলে রাব্বির চেম্বারে। সঙ্গে নির্যাতিত একটি শিশু ও তার বাবাকেও দেখা গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, নির্যাতিত তিন শিশুকেই তাদের অভিভাবকসহ মেয়রের সঙ্গে আদালতে আসতে বাধ্য করছেন তাঁর লোকজন। এ বিষয়ে ভয়ে মুখ খুলছে না নির্যাতিত শিশুদের পরিবার। স্থানীয়রা বলছেন, মেয়র হালিমের ভয়েই শিশুগুলোর পরিবার আপসের পথে হাঁটছে।

গত মঙ্গলবার রামচন্দ্রদী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কেউ তিন শিশুর ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। বহু খোঁজাখুঁজির পর ১১ বছর বয়সী প্রথম শিশুটির বাড়ি পাওয়া যায়। বাড়িতে শিশুটিসহ তার বাবা-মা কেউ নেই।

নির্যাতিতের চাচি জানান, ওর মা তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে চলে গেছেন। কোথায় গেছেন তাঁরা তা জানেন না। শিশুটির বাবা খাগকান্দায় একটি মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসাশিক্ষক।

প্রতিবেশীরা জানান, শিশুটি ও তার চাচাকে মেয়র হলিমের লোকজন তাঁর বাড়িতে নিয়ে গেছেন। ওই বাড়ির পাশেই নির্যাতনের শিকার আট বছর বয়সী আরেক শিশুর বাড়ি। সেই বাড়িতে গিয়েও ওই শিশুর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। নানি সালেমা খাতুন জানান, কেউ তাঁর নাতির কিছু করেনি। তাঁরাই নাতির চুল কেটে ফেলেছেন।

ওই দিন নানা জায়গা ঘুরে নির্যাতিত তিন শিশুর দেখা মেলে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এ সময় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ঘটনা সম্পর্কে নিজের বক্তব্য দিচ্ছিলেন মেয়র হালিম ও শিশুদের অভিভাবকরা।

জানা গেল, মেয়রের লোকজনই শিশুদের নিয়ে এসেছে, যাওয়ার সময়ও নিয়ে যাবে। এর মধ্যেই একটি শিশু সমকালকে জানায়, সাংবাদিক বা প্রশাসনের কাছে আসল ঘটনা বললে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদের হুমকি দিয়েছেন মেয়রের লোকজন। বিষয়টি জানতে ওই শিশুর বাবাকে সেদিন ফোন করা হলেও তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

গতকাল সকালে মেয়র হালিম তাঁর জামিনের ব্যাপারে কথা বলতে নারায়ণগঞ্জ আদালতে নিজের আইনজীবী ফজলে রাব্বীর চেম্বারে আসেন। এ সময়ও তাঁর সঙ্গে ওই শিশুর বাবা ছিলেন। টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তিনি মেয়রের সঙ্গে সন্তানকে নিয়ে আদালতে আসার কথা স্বীকার করেন। মেয়র চেম্বার ছেড়ে যাওয়ার সময় তাঁর লোকজন ওই শিশুর বাবাকে নিয়ে যান।

অন্য এক শিশুর অভিভাবক বলেন, আদালতে বাচ্চা ও আমরা মেয়রের পক্ষে বললে তাঁর জামিন পেতে সুবিধা। এজন্য তাঁদের নিজ খরচে আদালতে নিয়ে আসছেন মেয়র হালিম। তাঁরা যাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে না পারেন, সেজন্য মেয়রের লোকজন কঠোর নজরদারিতে রেখেছেন। এ বিষয়ে জানতে মেয়র হালিম শিকদারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁর নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।

মেয়রের আইনজীবী ফজলে রাব্বী জানান, আসামিপক্ষ গতকাল জামিনের আবেদন জমা দিতে পারেনি। আগামী রোববার তারা জামিনের আবেদন করতে পারে।
এদিকে মেয়র হালিম গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কমিশনের ঢাকা দক্ষিণ অঞ্চলের সমন্বয়ক মাহবুবুর রহমান মাসুম। তিনি বলেন, এটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। এ ঘটনায় আমি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এদিকে মেয়র হালিমকে গ্রেপ্তার না করা প্রসঙ্গে জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী সুপার (রূপগঞ্জ-আড়াইহাজার সার্কেল) আবির হোসেন বলেন, 'মামলার পর থেকেই মেয়র হালিম পলাতক রয়েছেন। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ। আমরা তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।' আদালত প্রাঙ্গণে মেয়রের আসা-যাওয়ার বিষয়টি তাঁকে জানালে ওই পুলিশ কর্মকর্তা প্রশ্ন এড়িয়ে যান।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত চলছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ। তিনি বলেন, তদন্ত দ্রুত শেষ করে আমরা কী পেলাম তা সাংবাদিকদের জানাব।