- সারাদেশ
- রাজাকার পরিবারের বাড়িতে সভায় আওয়ামী লীগ নেতা
রাজাকার পরিবারের বাড়িতে সভায় আওয়ামী লীগ নেতা
বিব্রত দলের নেতাকর্মী

নারায়ণগঞ্জের মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাকসুদ হোসেনের বাড়িতে সম্প্রতি রাতে অনুষ্ঠিত এক সভা বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মাকসুদ হোসেন চিহ্নিত রাজাকারের পুত্র। তাঁর বাবা, দাদাসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য ছিলেন শান্তি কমিটিতে। এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম ওসমান। এ ছাড়া ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি চন্দন শীল। তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও। এ সভা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীও নানা প্রশ্ন তুলছেন।
বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে লাঙ্গলবন্দ বাসস্ট্যান্ডের পাশে মাকসুদ হোসেন প্রাসাদোপম বাড়ি নির্মাণ করেছেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে এই বাড়িতে সভা হয়। ব্যানারে মতবিনিময় সভা লেখা থাকলেও নবনির্মিত বাড়ি উদ্বোধন করাই এ জমায়েতের মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। এতে বন্দরের ইউএনও, ওসি, সাতটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
চেয়ারম্যান মাকসুদের বাবা রফিকুল ইসলাম রফিক চিহ্নিত রাজাকার (প্রয়াত)। মুনতাসীর মামুনের লেখা 'শান্তি কমিটি ১৯৭১' বইয়ে শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে রফিকুল ইসলাম (সে সময়ে বন্দরের ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান), তাঁর দাদা মাইনুদ্দিন, চাচা আব্দুস সামাদ, আব্দুল মালেক ও গোলাম মোস্তফার নাম রয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন বইয়ে এই পরিবারের লোকজনের অপকর্মের বর্ণনা রয়েছে।
এ সম্পর্কে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের পর দালাল আইনে রফিক, তার পুত্রসহ আত্মীয়স্বজন মিলিয়ে ১৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর জিয়াউর রহমান দালাল আইন বাতিল করলে তারা মুক্তি পায়। মুক্তিযুদ্ধের পরেও তারা সব সময় আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সেই রাজাকারের সন্তানের বাড়ির অনুষ্ঠানে কীভাবে আওয়ামী লীগ নেতা ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি চন্দন শীল যায়, আমি বুঝতে পারি না। রাতে সেখানে মতবিনিময় সভা করার কী কারণ থাকতে পারে তা-ও বোধগম্য নয়।'
চন্দন শীল নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এমপি শামীম ওসমানের লোক হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে শামীম ওসমান এমপি থাকাকালীন তাঁর পিএস ছিলেন চন্দন শীল। ২০০১-এর ১৬ জুন চাষাঢ়ায় বোমা হামলায় চন্দন শীল দুই পা হারান। এ হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে দায়ী করে আসছেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, 'মুছাপুর ইউনিয়নে রফিক চেয়ারম্যান চিহ্নিত রাজাকার। এই পরিবারকে আশ্রয় দিচ্ছেন জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমান। একইভাবে নাসিম ওসমানও তাদের
আশ্রয় দিয়েছেন। শর্ষের ভেতরেই ভূত থাকলে আমরা কী করব? ঘটনাটি কেন্দ্রে জানাব। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দর ও নারায়ণগঞ্জ শহরের একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, রাজাকার রফিক ও তাঁর পরিবার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অনেক মানুষকে হত্যা করেন। তাঁদের পক্ষে আওয়ামী লীগের লোকজনও রয়েছে। ওই দিন মূলত মাকসুদের বাড়ি উদ্বোধন করতেই এ আয়োজন করা হয়। এটিকে 'মতবিনিময় সভা' নাম দেওয়া হয় মানুষকে বিভ্রান্ত করতে।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, 'চন্দন শীল ওসমান পরিবারের দোসর। তারা স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে কিন্তু কাজকর্মে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না।' তবে চন্দন শীল নির্মূল কমিটির কেউ নন বলে জানান ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয়ক কমিটির কার্যকরী সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, 'নারায়ণগঞ্জে নির্মূল কমিটি অনেক আগেই বিলুপ্ত করা হয়েছে। চন্দন শীল যা করেছেন, এটির দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ তাঁর।'
এ বিষয়ে চন্দন শীল বলেন, 'ওই সভায় আমি একা যাইনি। সেখানে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড-বিষয়ক মতবিনিময় সভা আহ্বান করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি উন্নয়নমূলক সভায় যেতেই পারি। সেখানে শুধু আমাকেই ফোকাস করা হচ্ছে। অন্য কারও কথা বলা হচ্ছে না। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নির্বাচন সামনে রেখে এ সভা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।' ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নারায়ণগঞ্জে কোনো সংগঠন না থাকা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'কেন্দ্র যদি বলে আমি নাই, তাহলে নাই। কিন্তু কেন্দ্র তো আমাকে কোনো নোটিশ দেয় নাই যে আমি নাই।'
মন্তব্য করুন