- সারাদেশ
- মজুরি নিয়ে আর আপত্তি নেই
মজুরি নিয়ে আর আপত্তি নেই

দিনাজপুরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নে ধানের চারা রোপণ করছেন নারী শ্রমিকরা - সমকাল
'ভোরত উঠিয়া জমিত আইসো। ধানের বিচন (চারা) তুলিয়া জমিত লাগাবার (রোপণ) কাজ শুরু করি। সকালত তো খুবই ঠান্ডা, কিন্তু এইটা দেখিলে তো হবে না। সবকিছুর দাম বেশি, সংসারটা তো চালাবা হবি। এই একটা মাস ধান গাড়ার কাম করিয়া কয়েকটা মাস চলিবা হবি। ছোয়ালগুলার মুখের দিক দেখিয়া কষ্ট তো করিবারই হবি। '
কথাগুলো বলছিলেন দিনাজপুর সদর উপজেলার ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের যোগীবাড়ী এলাকার জমিতে ধানের চারা রোপণ করার কাজে নিয়োজিত নন্দিতা বালা। নন্দিতা বালা দক্ষিণ ফরিদপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর মতো আরও ১৩ জন নারী শ্রমিকের কাজ করছেন ওই জমিতে। মূলত এসব নারী আমন ও বোরো মৌসুমে কৃষি শ্রমিক হিসেবেই কাজ করেন। সংসারের হাল ধরে রাখতেই দল বেঁধে ধান রোপণ, আগাছা পরিস্কার ও ধান কাটার কাজ করে থাকেন তাঁরা।
নন্দিতা বালার মতে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের যেভাবে দাম বেড়েছে, সে অনুপাতে কদর বাড়েনি নারী শ্রমিকের। পুরুষ শ্রমিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করলেও পুরুষ শ্রমিকের দৈনিক বেতন বা হাজিরা ৫০০-৬০০ টাকার বিপরীতে নারী শ্রমিকের বেতন ৩০০-৩৫০, কখনও বা ৪০০ টাকা।
তবে এ বছর তাঁরা একটু ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন। এবার তাঁরা চুক্তি হিসেবে কৃষি কাজ শুরু করেছেন। এক বিঘা জমিতে চারা তুলে রোপণ করার কাজ চুক্তি হিসেবে করছেন ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। এবারে চুক্তিতে চারা রোপণ করে তাঁরা বেশ খুশি। কারণ চুক্তিতে বেড়েছে দৈনিক উপার্জন।
নন্দিতা বালা, রঙ্গিনা বালা, অনিতা বালা, গৌরী বালারা জানান, তাঁরা ১৪ জন প্রতিদিন ছয় থেকে সাত বিঘা জমিতে বীজতলা থেকে চারা তোলা এবং সেই চারা জমিতে রোপণ করতে পারেন। এই হিসাবে তাঁরা প্রতিদিন ১২ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকার কাজ করতে পারেন। এতে জনপ্রতি দৈনিক উপার্জন হয় ৭৫০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে কাজটা একটু বেশি করতে হয়। যেখানে হাজিরা খাটতে গেলে তাঁরা সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ করেন। মাঝখানে দুই ঘণ্টা সময় পান দুপুরের খাওয়ার জন্য। সেখানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন ভোর থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে। তাঁদের মতে, এই একটি মাসই তাদের অধিক পরিশ্রম করতে হয়। এর পর এই পরিশ্রমের অর্থ দিয়েই তাদের আরও দুই-তিন মাস চলতে হয়।
রঙ্গিনা বালা বলেন, 'এই ইরি (বোরো) সিজিনত (মৌসুমে) যেইটা কামাই হয়, সেইটা দিয়াই দুইটা ছোয়ালের খাতা-কলম, স্কুলের বেতন, কাপড়-চোপড় কিনি দিবা হয়। ধান গাড়ার (রোপণের) কাজ করিয়া ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা হয়। এর পর ধানের ঘাস (আগাছা) বাছিবার সময় ডাক পড়িলে তখন তো দিন হাজিরায় খাটিবার হয়। ইরি সিজিনত ১৪-১৫ হাজার টাকার কাম হয়। এই জইন্যে পরিশ্রমটা একটু বেশিই করিবার হয়।'
গৌরি বালা বলেন, 'এইবারকা তো সবকিছুর দাম বাড়িছে; কিন্তু হামার বেতন বাড়ে নাই। এই জইন্যে বুদ্ধি করি হামরা ঠিকা (চুক্তি) কামত লাগিছি। যাতে করি একটু বেশি কামাই (উপার্জন) হয়।'
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই জেলায় ১ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৫৪০ টন।
মন্তব্য করুন