- সারাদেশ
- বিএনপি নেতার মার্কেটে তালা, দোকান-বসতবাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ
বিএনপি নেতার মার্কেটে তালা, দোকান-বসতবাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ

গৌরনদী খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের মাগুর বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের হামলা-ভাংচুর
বরিশালের গৌরনদীর খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে হামলার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতে ইউনিয়নের মাগুরা বাজারে বিএনপির সমর্থকদের একটি বসতবাড়ি, ৩টি চায়ের দোকান, ১টি মুদি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়।
শনিবার সকালে আওয়ামী লীগ নেতাকার্মীরা ইউনিয়নের বাঁকাই বাজারে গিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা আক্কেল সরদারের মার্কেটে তালা মেরে দিয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে সকাল থেকে এলাকাতে মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ফলে খাঞ্জাপুরে ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ মুন্সী এবং সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি সুমন মাহমুদের নেতৃত্বে শুক্রবার রাতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
তারা জানান, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে হামলাকারীরা ২টি মাইক্রোবাস ও ৩০-৩৫টি মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে গৌরনদী পৌরশহর থেকে খাঞ্জাপুরে যায়। রাত ১০ টা পর্যন্ত তারা মাগুরা বাজার এলাকায় তাণ্ডব চালায়। একপর্যায়ে গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে হামলকারীরা রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থল ছেড়ে যায়।
খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন বিএনপিকর্মী আক্কেল সরদার জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র হারিছুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ মুন্সী ও খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরে আলম সেরনিয়াবাতের নেতৃত্বে প্রায় ৩০০ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী শনিবার সকালে পূনরায় বাঁকাই বাজারে যান। তারা সেখানে আনন্দ মিছিল শেষে আক্কেল সরদারের মালিকানাধীন মার্কেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ওই মার্কেটে সোনালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকের শাখা ও ৫০টি দোকান রয়েছে।
আক্কেল সরদার জানান, তিনি প্রাণভয়ে আত্মগোপনে আছেন।
শুক্রবার রাতের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব স্বপন হাওলাদার জানান,শনিবারের পদযাত্রা সফল করতে শুক্রবার সন্ধ্যায় তারা প্রস্তুতি সভা করেন। সভা শেষে রাত ৮টার দিকে তারা ৫/৬জন নেতাকর্মী মাগুরা মাদ্রাসা সংলগ্ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা পান করছিলেন। এসময় তারা খবর পান একদল আওয়ামী লীগ কর্মী মোটরসাইকেল মহড়া নিয়ে আসছে। পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যান।
কিছুক্ষনের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান ও ফরহাদ মুন্সী ও সাবেক ভিপি সুমন মাহামুদের নেতৃত্বে ২টি মাইক্রোবাস ও ৩০/৩৫টি মোটরসাইকেলে শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী মাগুরা বাজারে পৌঁছায়। তাদের হাতে ছিল রামদা, চাইনিজ কুড়াল লাঠিসোটা। তারা বাজারে বিএনপি সমর্থক মামুন হাওলাদারের মুদি দোকান, বেল্লাল সরদার, মামুন সিকদার ও হেলাল ফকিরের চায়ের দোকান ব্যাপক ভাংচুর ও বেল্লাল সরদারের দোকানের টিভি খুলে নিয়ে যায়। তাণ্ডব শেষে হামলাকারীরা বিএনপি সমর্থক রাজ্জাক শেখের বাড়িতে ঢুকে বসতঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। এক পর্যায়ে গ্রামবাসী ধাওয়া দিলে রাত ১০টার দিকে হামলাকারীরা চলে যায়। পরে গৌরনদী মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নুরে আলম সেরনিয়াবাত সমকালকে জানান, শুক্রবার রাতে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী মাগুরা বাজারে গিয়েছিল। স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হলে দলের নেতাকর্মীরা চলে আসেন। পরে কারা দোকানপাট ভাংচুর করেছে এ বিষয় তার জানা নেই।
শনিবার সকালে ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ মুন্সীসহ বাঁকাই বাজারে গিয়েছিলেন স্বীকার করে নুরে আলম বলেন, আক্কেল সরদারের মার্কেটে তালা মারার অভিযোগ মিথ্যা। পৌর মেয়র হারিছ বাঁকাইতে যাননি বলেও দাবি করেন নুরে আলম।
অপরদিকে ফরহাদ মুন্সী সব অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে বলেন, খাঞ্জাপুরে কিছুই হয়নি। তিনিও সেখানে যাননি।
গৌরনদী থানার ওসি আফজাল হোসেন শনিবার বেলা দেড়টায় সমকালকে বলেন, খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে কোন ঘটনার খবর তার জানা নেই। শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টহলের অংশ হিসাবে পুলিশ সব জায়গাতেই ঘুরে’।
এদিকে খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ফজলুল হক সরদার জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে শনিবার সকাল ৭টার দিকে ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে খাঞ্জাপুর সেতু পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ১ কিলোমিটার অংশে তারা পদযাত্রা করেছেন।
মন্তব্য করুন