জামালপুর শহরে স্ত্রী-সন্তানদের নামে ১৪ শতাংশ জমি কেনেন অবসরপ্রাপ্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ফজলুল আলম সিদ্দিকী। সেই জমি এক ভূমি সহকারী কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে জাহাঙ্গীর হোসেন নিউম্যানের নামে রেকর্ড সংশোধন করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তৎকালীন সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দেওয়া অবৈধ রেকর্ড সংশোধনীর আদেশ বাতিল করতে এক বছর ধরে ঘুরতে হচ্ছে ভুক্তভোগী ফজলুল আলমকে।

জামালপুর পৌর এলাকার শাহপুর গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ফজলুল আলম সিদ্দিকী। জমি রক্ষায় তাঁর দায়ের করা একটি রিভিউর আদেশ পেতে ভূমি অফিসে ঘুরতে হচ্ছে মাসের পর মাস। এ ঘটনায় মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের আদেশও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে ফাইলবন্দি হয়ে আছে। এ কারণে বাধ্য হয়েই সহকারী কমিশনারের (এসিল্যান্ড) বিরুদ্ধে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মেনডেটরি মামলা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

ভুক্তভোগী ফজলুল আলম সিদ্দিকীর ভাষ্য, শাহপুর ও ফুলবাড়িয়া মৌজার সীমান্তে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে ৩০ বছর আগে ১৪ শতাংশ জমি কেনেন তিনি। সেখানে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। কিন্তু ২০২১ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি বসতভিটার অবশিষ্ট জমিতে মাটি ভরাটের সময় বাধা দেন প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর হোসেন নিউম্যান। ওই জমি দখলের চেষ্টা চালান তিনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে হুমকি দিয়ে চলে যান তাঁরা। এ ঘটনার প্রতিকার পেতে জামালপুর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা করেন জমির মালিক ফজলুল আলম সিদ্দিকী। আদালতে মামলার কার্যক্রম বিবাদী জাহাঙ্গীর আলম নিউম্যানের বিরুদ্ধে গেলে পৌর ভূমি অফিসে রেকর্ড সংশোধনীর আবেদন করেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, জামালপুর পৌর ভূমি অফিসের একটি দুর্নীতিবাজ চক্র ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ইমান আলীর স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া প্রতিবেদন তৈরি করে। পরে তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিনা আক্তারের মাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলম নিউম্যানের নামে রেকর্ড সংশোধন করা হয়। এই প্রতিবেদন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করলে প্রত্যাখ্যান করে দেন। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু তা আমলে নেননি তিনি।

এ ঘটনায় ন্যায় বিচার চেয়ে জামালপুর সিনিয়র সহকারী জজ-১ আদালতে মামলা করেন ফজলুল আলম সিদ্দিকী। ওই মামলায় গত বছরের ১৮ অক্টোবর সহকারী কমিশনারের আদেশকে বেআইনি ঘোষণা করে বাদীর নামে পৃথক খতিয়ান খোলার আদেশ দেন আদালত। কিন্তু সহকারী কমিশনার বরকত উল্লাহ আদালতের আদেশকে আমলে না নিয়ে আবার তদন্তের নামে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন বলে অভিযোগ বাদীর। এক পর্যায়ে পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ারকে দিয়ে পৃথকভাবে তদন্ত করান। ওই তদন্ত প্রতিবেদনও যায় বাদীর পক্ষে।

ফজলুল আলম সিদ্দিকীর অভিযোগ, সব কাগজপত্র ও একাধিক মামলার রায় পক্ষে থাকার পরও তাঁর নামে খতিয়ান খুলতে টালবাহানা করছেন সহকারী কমিশনার। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, সারা জীবন ভূমি অফিসে চাকরি করেও খতিয়ান খুলতে তাঁকে গলদ্ঘর্ম হতে হচ্ছে।

তবে জাহাঙ্গীর আলম নিউম্যানের দাবি, পৈতৃক সূত্রে ওয়ারিশ হিসেবে বিরোধপূর্ণ জমিটির মালিক তাঁরা। বাদী পক্ষের দাবি অযৌক্তিক।

বিষয়টি জানতে তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিনা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাঁর মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
জামালপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরকত উল্লাহ সমকালকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু চলছে।