- সারাদেশ
- তুরস্কে ভূমিকম্প: দুর্ভাগ্য নাকি অপরাধ
তুরস্কে ভূমিকম্প: দুর্ভাগ্য নাকি অপরাধ

তুরস্কের আদিয়ামান শহরে ভূমিকম্পের ১৯৮ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ সাফেরকে আলজাজিরা
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত একটি বহুতল ভবনে থাকা খাদ্যপণ্যের দোকানের ফ্রিজ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোমল পানীয় বের করার চেষ্টা করছিলেন দক্ষিণ তুরস্কের ওসমানিয়ের ব্যবসায়ী হালিল ইব্রাহিম চালিস্কান। মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে আর ব্যবসার অনুমতি দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই ব্যবসায়ী তাঁর নষ্ট না হওয়া পণ্যগুলো কোম্পানিকে ফেরত দিতে চান। যাতে দেনা কিছুটা কমে। তাঁর দোকানে প্রায় ১০ লাখ তুর্কি লিরা বা ৫৩ হাজার ডলারের মালপত্র ছিল। গত ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে এর সবই হারিয়েছেন তিনি। খবর আলজাজিরার।
ইব্রাহিম চালিস্কানের দাবি, ভূমিকম্পে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা দুর্ভাগ্য নয় বরং মানুষই এর জন্য দায়ী। ভবনগুলো কতটা মজবুত করে নির্মাণ করা হয়েছে, সরকার তা খতিয়ে দেখেনি বলেই এই ভয়াবহতা। এই ব্যবসায়ী জানান, যে ভবনে তিনি ব্যবসা করতেন, সেটি মাত্র ১৯ বছর আগে নির্মিত। এখন সেটি ভেঙে ফেলতে হবে।
চালিস্কান আরও জানান, তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে ভোট দিতেন। কিন্তু আগামী নির্বাচনে তিনি আর এরদোয়ানের দলকে ভোট দেবেন না। পক্ষ নেবেন বিরোধীদের। তাঁর অভিযোগ, দেশের ভবনগুলোর এ অবস্থার জন্য সরকারই দায়ী।
অন্যদিকে, একই ভবনের অষ্টম তলায় থাকতেন ৬৩ বছর বয়সী ডোগান ইশদার এবং তাঁর স্ত্রী ফিগেন (৫৩)। তাঁরা ব্যবসায়ী চালিস্কানের সঙ্গে কোনোভাবেই একমত নন। তাঁরা খাবার, পোশাক পাচ্ছেন। ভূমিকম্পের পর স্থানীয় একটি ছাত্রাবাসে তাঁদের রাখা হয়েছে।
ডোগান বলেন, 'আমি সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। সরকার জোরালোভাবে আমাদের সহযোগিতা করছে। এমনকি আমাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সাহায্য করছে। যদি কেউ বলে সরকার সাহায্য করছে না, তাহলে তা ঠিক নয়।'
তিনি বলেন, ভবন ধসে পড়ার ক্ষেত্রে মূল দোষী হলেন নির্মাতারা। কারণ, তাঁরা সঠিকভাবে ভবন নির্মাণ না করে, এতদিন নিজেদের অপরাধ লুকিয়ে রেখেছিলেন। তিনি আরও বলেন, 'যা হয়েছে, তা কপালে ছিল। বেঁচে আছি, এটাই তো বেশি।'
এদিকে, উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান এখন শেষের পথে। মঙ্গলবার উদ্ধারকারী দল হোয়াইট হেলমেটস রেসকিউ গ্রুপের প্রধান জানিয়েছেন, সিরিয়ার বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলটিতে জীবিতদের খোঁজার অভিযান প্রায় শেষ।
রায়েদ আল-সালেহ বলেন, তাঁদের কাছে মনে হচ্ছে ধ্বংসস্তূপে আর কেউ বেঁচে নেই। সব এলাকায়ই তাঁরা অভিযান চালিয়েছেন। তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্তবর্তী ছিটমহলের নিখোঁজদের নামও সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি।
জাতিসংঘের একটি দল বাব আল-হাওডা ক্রসিং দিয়ে মঙ্গলবার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে। দলটিতে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস এবং ইউনিসেফের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এর আগে গত সোমবার সিরিয়া সরকার জাতিসংঘের সাহায্যের গাড়ি বহরকে তুরস্ক থেকে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় আরও দুটি ক্রসিং ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। পরে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা সামগ্রী নিয়ে ৬টি ট্রাক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া অঞ্চলটিতে প্রবেশ করে। সেখানে খাদ্যপণ্যের অভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে মানুষ।
এদিকে, সিরিয়ায় উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছেন অন্তত ৩০০ রুশ সেনা। এ ছাড়া দেশটির স্বেচ্ছাসেবকরা দুই দেশের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সাহায্য সংগ্রহ করছে। এরই মধ্যে ১ টন খাদ্যসহ অন্যান্য সহায়তা এবং ১০ লাখ ডলারের বেশি দান করেছে তারা। অন্যান্য দেশও সহায়তা পাঠানো অব্যাহত রেখেছে।
সহমর্মিতা জানাতে মঙ্গলবার তুরস্ক সফর করেছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন। তিনি জানান, সম্পর্কোন্নয়ন হওয়ায় আগামী বৃহস্পতিবার থেকেই তুরস্ক থেকে ইসরায়েলে সরাসরি বিমান চালু হবে। ভূমিকম্পের পর গত সপ্তাহে ত্রাণ সহায়তাও পাঠায় দেশটি।
মন্তব্য করুন