অষ্টম বিপিএল শুরুর আগে বেশ আক্ষেপ নিয়ে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটির এত আসর থেকে নাকি মাত্র দু'জন তরুণ ক্রিকেটার বের হয়েছেন! সে তুলনায় সদ্য শেষ হওয়া নবম আসরে বেশ ক'জন তরুণ ক্রিকেটার নজর কেড়েছেন। তৌহিদ হৃদয় এই বিপিএলের পারফরম্যান্স দিয়ে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন। নাজমুল হোসেন শান্ত দারুণ ধারাবাহিকতায় নিজেকে নতুন করে চেনালেন। তানভীর ইসলাম এই বিপিএল দিয়ে জাতীয় দলের স্পিন বিভাগে যুক্ত হওয়ার দাবি জানিয়ে রাখলেন। তরুণ পেসার হাসান মাহমুদও উইকেট শিকারে মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। এ ছাড়া ব্যাটিংয়ে জাকির হাসান সামর্থ্য দেখিয়েছেন। তরুণ পেসার তানজিম হোসেন সাকিবও সম্ভাবনার ইঙ্গিত রেখেছেন। তারুণ্যের টি২০ তে তরুণরা পারফর্ম করেছেন।

এই তরুণদের দাপটের মাঝে দু'জন প্রায় হারিয়ে যাওয়া ক্রিকেটার নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। দু'জনের মধ্যে নানা বিতর্কে জর্জরিত নাসির হোসেনের যেন পুনর্জন্ম হয়েছে। ব্যাটে-বলে দুরন্ত পারফর্ম করে তিনি সবাইকে চমকে দিয়েছেন। ব্যাট হাতে ১২ ম্যাচে ৩৬৬ করে রান সংগ্রাহকদের তালিকায় ষষ্ঠ হয়েছেন। আর অফস্পিনে ১৬ শিকার নিয়ে উইকেট সংগ্রহে দ্বিতীয় হয়েছেন। স্পিন অলরাউন্ডার হিসেবে জাতীয় দলের মোসাদ্দেক হোসেন ও শেখ মেহেদিরা যখন ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছেন না, সেখানে বিপিএলে দুর্দান্ত পারফর্ম করে নাসির যেন দাবি জানিয়ে রাখলেন। এবারের বিপিএলে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন রনি তালুকদারও। রংপুর রাইডার্সের সাফল্যের অন্যতম কারিগর জাতীয় দলের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এ ওপেনার। ১৩ ম্যাচে ৪২৫ করে রান সংগ্রহে দ্বিতীয় স্থানে তিনি।

জাতীয় দলে নাজমুল হোসেন শান্তকে কেন এত সুযোগ দেওয়া হয়- সমালোচকদের এটি ছিল একটি কমন প্রশ্ন। শান্ত দারুণ ধারাবাহিকতায় এ প্রশ্নের জবাব তো দিয়েছেনই, বিপিএলের রেকর্ড বইয়েও নাম লিখিয়েছেন। বিপিএলের ৯টি আসরে শান্ত হলেন একমাত্র বাংলাদেশি যে কিনা ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন। একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রুশো রংপুর রাইডার্সের হয়ে ২০১৯ সালে ৫০০ রান করেছিলেন। এ কীর্তি তৌহিদ হৃদয়ও করতে পারতেন। এমনকি শান্তকে ছাড়িয়ে রান সংগ্রহে সেরাও হতে পারতেন। কিন্তু তাঁর দুর্ভাগ্য, দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে টানা তিন খেলায় ম্যাচসেরা হওয়ার পর ফিল্ডিং করতে গিয়ে আঙুল ফেটে যায় তাঁর। এ জন্য প্রায় দুই সপ্তাহ মাঠের বাইরে ছিলেন। এর পরও ১২ ইনিংসে ৪০৩ করে রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তৃতীয় হয়েছেন। যার পুরস্কার হিসেবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডের দলে ডাক পেয়েছেন তিনি।

এবারের বিপিএলে জাতীয় দলের অনেক তারকা ছিলেন ভীষণ নিষ্প্রভ। ইয়াসির আলী রাব্বিকে ব্যাট হাতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। জাতীয় দলের মিডলঅর্ডারের আরেক তারকা আফিফ হোসেন দুটি হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৪৪ রান করেছেন, কিন্তু তাঁর ব্যাটিং দলের উপকারে খুব একটা আসেনি। এ ছাড়া নাঈম শেখ, সৌম্য সরকার, এনামুল হক বিজয়, মাহমুদুল হাসান জয়, নুরুল হাসান, শামীম হোসেনের মতো মুখগুলো তেমন ভালো করতে পারেননি। স্পিনারদের মধ্যে নাসুম আহমেদ, নাজমুল ইসলাম অপু, মোসাদ্দেক হোসেন, শেখ মেহেদি হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজও সাফল্যের দেখা পাননি। বরং তানভীর, নাসির, নাহিদুজ্জামানরা বাজিমাত করেছেন।

বিপিএলে সব সময় অভিজ্ঞরা ভালো করলেও এবার এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে। সাকিব ও লিটন ছাড়া তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের মতো অভিজ্ঞরা এবার প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। এটাই হয়তো পালাবদলের সূচনা!