মোংলা থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন নুসরাত আক্তার। গাড়ির টিকিটও এক দিন আগেই কেটে রেখেছিলেন। সকাল ৭টায় গাড়িটি ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তাঁর পৌঁছানো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কারণ, সকালে নদ পার হতে গিয়ে তাঁকে পড়তে হয় বিপদে। ভিড়ের মধ্যে ১৫ মিনিট ধরে ঠেলাঠেলি করে ট্রলারে করে ভয়ে ভয়ে নদ পার হচ্ছিলেন। তবে দুই ট্রলারের ধাক্কায় এক পর্যায়ে পানিতে পড়ে যায় তাঁর লাগেজ। তিনি বলছিলেন, এভাবে নদ পার হওয়ার অভিজ্ঞতা ভোলা যাবে না। এত যাত্রী নিয়ে ডুবুডুবু অবস্থায় চলছে ট্রলার।

মোংলা নালার (নদ) পশ্চিমপাড়ে স্থায়ী বন্দর। আর পূর্বপাড়ে পুরোনোটি। উত্তর-দক্ষিণে নালার বিস্তৃতি। এটি বেশ খরস্রোতা। ছোট-বড় জাহাজ ও নৌযান চলাচল করে। স্থায়ী বন্দর এলাকায় রয়েছে শিল্পকারখানা, নালার পূর্বপাড়ে আবাসিক এলাকা। ফলে জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার শ্রমিককে ট্রলারে ঝুঁকি নিয়ে নদ পার হতে হয়। নানা কাজে আরও অন্তত ৫ হাজার মানুষ পার হচ্ছেন। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে উঠতে হয় তাঁদের।

স্থানীয় সূত্রে ও সরেজমিন জানা গেছে, প্রতিদিন সকালে নদের পূর্বপাড় ও সন্ধ্যায় পশ্চিমপাড় থেকে শত শত যাত্রী নিয়ে গাদাগাদি করে পার হয় ট্রলারগুলো। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের নাকের ডগায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নদ পার হচ্ছে ট্রলার। অথচ প্রতিটিতে সর্বোচ্চ ১৫ জন পারাপারের নিয়ম রয়েছে।

যাত্রীরা বলছেন, যাত্রীর মাত্রাতিরিক্ত চাপ কাজে লাগিয়ে অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে ফেলেছেন ট্রলারের মাঝিরা। এতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তাঁদের। বন্দর এলাকার কলকারখানা, বিশেষ করে মোংলা ইপিজেড খোলা ও বন্ধ হওয়ার সময় প্রতিটি ট্রলারে যাত্রীর সংখ্যা ৯০ জন ছাড়িয়ে যায়। সামান্য ধাক্কাতে পানিতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাত্রীর ভারে ডুবুডুবু থাকে ট্রলারগুলো। প্রায়ই ধাক্কাও লাগে দুই ট্রলারে।

ইপিজেড কর্মী ফাতেমা আক্তার জানান, ভোরে বাড়ি থেকে বের হতে হয় তাঁকে। অন্যথায় নদের ঘাটে ঠেলাঠেলি করে পার হতে কষ্ট হয়। কয়েকজন যাত্রী জানান, অনেক সময় জেটিতে লাইনে দাঁড়িয়ে ৫০ গজের মতো পথ ১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে পার হতে হয়। মাঝিরা সামান্য জায়গাও খলি রাখেন না। নারীদের বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। এক সপ্তাহ আগেই ট্রলারের ধাক্কায় অন্তত ১০ জন নদের পানিতে পড়ে যান।

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন ৬০ বছর বয়সী ফজর আলী। উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসক। তবে স্বজনরা খেয়াঘাটে পড়েন ভোগান্তিতে। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘাটে আনা হলেও তাঁকে ট্রলারে ওঠাতে পারেন আধা ঘণ্টা পরে। এতে রোগীর অবস্থার অবনতি হয়। কষ্টে নদ পার করে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানো হয় তাঁকে। স্থানীয়রা বলছেন, এ রকম অবস্থা প্রায়ই হচ্ছে।

ট্রলারচালক আবুল কালাম ও খলিলুর রহমান বলেন, ইপিজেড চলাকালে সর্বোচ্চ ৩০ জন ও অন্য সময় ১৫ জন যাত্রী নিয়ে নদ পারাপারের কথা। তবে সকালে ও সন্ধ্যায় এটি ঠিক রাখা যায় না। যাত্রীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন আগেভাগে গন্তব্যে পৌঁছানোর। ঝুঁকি থাকলেও বাড়তি আয় হয়।

ইউএনও দীপংকর দাশ বলেন, মোংলা পোর্ট পৌরসভার মাধ্যমে নদের দু'পাড়ে নির্মাণ করা হবে বিকল্প ঘাট।

মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান বলেন, যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে ও ঝুঁকি এড়াতে নদের পশ্চিমপাড়ে ঘাট নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। পূর্বপাড়ে আরেটি ঘাটের নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন। দুটি ঘাট চালু হলে সমস্যার সমাধান হবে।