বেনাপোল কাস্টম হাউসের অফিসকক্ষে বসে একজন কর্মকর্তার ‘ঘুষের টাকা নেওয়া’র ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।

এটি কাস্টম হাউসের সাপ্তাহিক ঘুষের টাকা গ্রহণের ভিডিও বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টাকা গ্রহণকারী কর্মকর্তা।

আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ঘিরে বেনাপোলে শুল্ক ফাঁকির সিন্ডিকেটের তৎপরতার খবর বেশ পুরোনো। বড় বড় চালান ধরা পড়ার নজিরও কম নয়। ঘুষের বিনিময়েই সেখানে চলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি। হরহামেশাই এমন অভিযোগ ঘুরপাক খেলেও শনাক্ত করা যায়নি জালিয়াতচক্রের সদস্যদের। তবে গত কয়েকদিন ধরে মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি অভিযোগের তীরকে ধারালো করেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) বনলতা রায় নিজ দপ্তরে বসে আছেন। সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে একদল লোক। পর্যায়ক্রমে ওই কর্মকর্তা তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে ড্রয়ারে গুনে রাখছেন। এরপর ক্যালকুলেটরে হিসেব মিলিয়ে নিয়ে সামনে থাকা ফাইলে দিচ্ছেন বিশেষ চিহ্ন। লেনদেন নিয়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় এদের একজনের ফাইলটিতে বিশেষ চিহ্ন না দিয়ে সরিয়ে রাখেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হলেও ব্যবসায়ীরা জানান, বনলতার সামনে দাঁডিয়ে থাকা লোকগুলো সিএন্ডএফ এজেন্ট প্রতিনিধি। ‌‘স্পিড মানি’ নামে সাপ্তাহিক ঘুষের টাকা দিচ্ছেন তারা। আগে কাস্টমস হাউসের বাইরে ঘুষের টাকা লেনদেন হলেও বর্তমান কমিশনার আব্দুল হাকিম যোগদানের পর কাস্টমস হাউসে প্রকাশ্যেই চলে এসব লেনদেন। এর আগে এ হাউসে কর্মরত থাকাকালে দুর্নীতির দায়ে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। এবার যোগদানের পরপরই একটি শুল্ক ফাঁকি চক্রের মাধ্যমে পচনশীল পণ্য আমদানি খাত থেকে কাস্টমস কর্তকর্তাদের নামে কোটি কোটি টাকার ঘুষ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করেন ভিডিওতে টাকা গ্রহণকারী সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) বনলতা রায়।

এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। পরে অস্বীকার করে বনলতা রায় বলেন, ‌‘কোন ভিডিওর কথা বলছেন জানি না। তবে কোনো কিছু কিনতে দেওয়ার জন্যে হয়তো কাউকে টাকা দিচ্ছিলাম।’ টাকা প্রদান নয়, আপনি গ্রহণ করছেন— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি রপ্তানি গ্রুপে কাজ করি। সেখানে টাকা গ্রহণের সুযোগ নেই।’

এ ব্যাপারে জানতে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার আব্দুল হাকিমের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি। একাধিক ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও ফোন রিসিভ করেননি। জবাব দেননি ক্ষুদেবার্তারও।

এদিকে প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) যশোরের সভাপতি অধ্যক্ষ শাহিন ইকবাল সমকালকে বলেন, 'প্রকাশ্য দিবালোকে যারা অনৈতিক লেনদেন করছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ।'