বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিপাকে পড়েছে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চালকদের নৈরাজ্য থামাতে গিয়ে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বিভাগের সবচেয়ে বড় এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা। অ্যাম্বুলেন্স চালকরা একজোট হয়ে হাসপাতালের পরিবহন সেবাই বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাঁদের স্বজনরা। যথাসময়ে পরিবহন সেবা না পেয়ে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন অনেক সেবাপ্রত্যাশী। গতকাল রোববার সকাল ১১টা থেকে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

গতকাল দুপুর ২টায় হাসপাতাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা জরুরি বিভাগ-সংলগ্ন খোলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। নিজেরাও পরিবহন সেবা দিচ্ছিলেন না, আবার সরকারি অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে তাদের কার্যক্রমেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছিলেন। এতে সেখান থেকে রোগী পরিবহন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করলে তারা গিয়ে চালকদের সরিয়ে দেয়। কিন্তু পরক্ষণেই তারা আবারও হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশ করে নানা স্লোগান উচ্চারণসহ রোগী পরিবহনে বাধা দেওয়া শুরু করে।

বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ আলম বলেন, হাসপাতাল চত্বরে সব অ্যাম্বুলেন্স রাখতে না দিলে আমরা রোগী পরিবহন করব না। এ সংগঠনের অধীনে ১২০টি অ্যাম্বুলেন্স আছে। এর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ৮০টি রোগী পরিবহন করে। বরিশাল থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা। জ্বালানি তেলের মূল্য অনুযায়ী এই দর বেশি নয়।

তিনি অভিযোগ করেন, আসলে আমাদের কারণে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্যর‌্যা ট্রিপপ্রতি চালকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ চেয়েছেন। এতে রাজি না হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে হাসপাতাল চত্বরের মধ্যে রাখতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের কমিশন দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালাতে গেলে রোগীদের ঘাড়ে বাড়তি ভাড়ার বোঝা চাপাতে হবে। এটি অমানবিক।

আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ভিত্তি নেই দাবি করে হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, জরুরি বিভাগ-সংলগ্ন খোলা চত্বরটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা দখল করেছেন। ভাড়ার জন্য রোগীর স্বজনরা এলে চালকরা সিন্ডিকেট করে কয়েকগুণ ভাড়া আদায় করছেন। এ জিম্মিদশা থেকে রোগীদের মুক্ত করার জন্য চালক সংগঠনের নেতাদের ডেকে আনা হয়। তাঁদের বলা হয়, হাসপাতাল এলাকার মধ্যে ১০টির বেশি অ্যাম্বুলেন্স রাখা যাবে না। ক্রম অনুসারে তাদের রোগী পরিবহন করতে হবে। অন্য অ্যাম্বুলেন্সগুলো থাকবে হাসপাতালের বাইরে।

তিনি আরও বলেন, রোগী পরিবহনে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ছয় টাকা। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সর্বোচ্চ ১০-১৫ টাকার মধ্যে রাখার জন্য বলা হয়। সকালে এসব নির্দেশনা দেওয়ার পরই তাঁরা বিশৃঙ্খলা শুরু করেন। বন্ধ করে দেন রোগী পরিবহন। তাঁরা হাসপাতালের ফটকে অবস্থান নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চলাচলই বন্ধ করে দিয়েছেন। এটি রীতিমতো অরাজকতা।