- সারাদেশ
- ভারপ্রাপ্ত মেয়র কিরনের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ
গাজীপুর সিটি করপোরেশন
ভারপ্রাপ্ত মেয়র কিরনের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বেয় গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার রুল জারিসহ এ আদেশ দেন। রুলে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। দুদকসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারোয়ার আহমেদ। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
গত ২১ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে ‘কিরনের কেরামতিতে বেহাল গাজীপুর সিটি করপোরেশন’- প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে গাজীপুরের দু'জন বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ও জিল্লুর রহমান আসাদুর রহমান কিরনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরনের কেরামতিতে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। লাগামহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম করে সাধারণ কাউন্সিলর হয়েও রাতারাতি হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যাওয়া, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, দ্বৈতনাগরিকত্ব, কমিশন বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ বিক্ষুব্ধ নগরবাসী গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরনের বাবা মরহুমর নূর মোহাম্মদ খান ছিলেন একটি স্কুলের দপ্তরি। এমনকি আসাদুর রহমান কিরন নিজেও একটি কারাখানার শ্রমিক ছিলেন। প্রায়ত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে তার রাজনীতির হাতেখড়ি। এরপর গাজীপুরে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নুরুল ইসলাম সরকারের ছত্রছায়ায় টঙ্গীতে কিরনের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়।
২০০০ সালে বর্তমান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান দ্বিতীয় মেয়াদে টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে কিরন রাতারাতি আজমত উল্লাহ খানের ঘনিষ্টজন হয়ে যান। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনি টঙ্গী পৌরসভার কমিশনার এবং ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। কমিশনার নির্বাচিত হয়ে কিরন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক মান্নান ২০১৩ সালে সাময়িক বরখাস্ত হলে আসাদুর রহমান কিরন বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে প্যানেল মেয়র এবং ভারপ্রাপ্ত মেয়র নির্বাচিত হন।
ভারপ্রাপ্ত মেয়র নির্বাচিত হয়ে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ২৭ মাসে কিরন সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। গাজীপুরের টঙ্গীতে ৩টি এবং ভালুকায় ২০০ বিঘা জমিতে ১টি শিল্প কারখানা গড়ে তোলেন এবং টঙ্গী, উত্তরায় অসংখ্য জমি, ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করেন। কিরন দায়িত্ব পালনকালে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন শিল্প কারখানার হোল্ডিং ট্যাক্স জালিয়াতি করে কমিয়ে এবং ঠিকাদারদের থেকে কমিশন বাণিজ্য করে বিভিন্ন সেটেলমেন্ট করে কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিরন ও তার স্ত্রীর নামে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে ৩টি বিলাসবহল বাড়ি রয়েছে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক। ২০২১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির দায়ে সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বরখাস্ত হলে কিরন আবারও বিপুল অর্থের বিনিময়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মন্তব্য করুন