
ফাইল ফটো
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দের ওএমএসের চাল বেশি দামে অন্যত্র বিক্রির অভিযোগ উঠেছে পেয়ার হোসেন নামে এক ডিলারের বিরুদ্ধে। বেশিরভাগ চাল বাড়তি দামে খোলা ও কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা। এতে চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শত শত হতদরিদ্র মানুষ। এভাবে বিক্রির কথা স্বীকার করে ডিলার বলেন, ‘অফিসের খরচ’ দিতে কিছু চাল বাইরে বিক্রি করেন তিনি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন আয়ের মানুষকে সহযোগিতা ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে ওএমএসের চাল বিক্রি করছে সরকার। এ কার্যক্রম পরিচালনায় চারজন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত মূল্যে বিক্রির জন্য প্রত্যেককে প্রতিদিন এক টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে প্রতিদিন ২০০ জনের কাছে বিক্রি করেন। একজন সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি কিনতে পারেন।
গত বুধবার রামগঞ্জ বাজারের নন্দনপুর এলাকায় ডিলার পেয়ার হোসেনের বিক্রয়কেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা কয়েকজন হতদরিদ্র চাল না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৮০ থেকে ১০০ জনের কাছে চাল বিক্রি করে কেন্দ্র বন্ধ করে দেন ডিলার। এরপর বাকি চাল নকল টিপসই ও অন্যের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়ে ভুয়া তালিকা তৈরি করে বিক্রি হয়েছে বলে দেখান ডিলার। উপকারভোগীদের অভিযোগ, কয়েক মাস ধরে এভাবে বিক্রি করছেন তিনি।
দিনমজুর জহির, স্বপনসহ ৮-১০ জন সুবিধাভোগী অভিযোগ করেন, ডিলার পেয়ার হোসেন খাদ্যগুদাম থেকে চাল বের করার সময় বেশিরভাগ অন্যত্র সরিয়ে ফেলেন। ৪০ থেকে ৫০ মিনিট বিক্রির পর শেষ দেখিয়ে সবাইকে চলে যেতে বলেন। পরে সরিয়ে নেওয়া চাল একটি চক্রের মাধ্যমে দরিদ্রদের কাছেই বেশি দামে বিক্রি করেন। ৩০ কেজির প্রতি বস্তা বিক্রি হয় ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়। সুবিধাভোগীরা প্রতিবাদ করলে তাঁর লোকজন হুমকি-ধমকি দেন।
রিকশাচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, রাস্তায় আগের মতো ভাড়া নেই। প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছেন। বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় সরকারি চাল কিনতে এসেছিলেন। কিন্তু ডিলার চাল দেননি।
সোহাগ হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, পেয়ার হোসেন একজন ঠিকাদার। তাঁদের ঠিকাদারের অধীনে অনেক শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের খাওয়ানোর জন্য পেয়ারের কাছ থেকে প্রতি বস্তা ১ হাজার ২৫০ টাকা করে তিন বস্তা চাল কিনেছেন তিনি। তবে কোন ঠিকাদারের নির্দেশে চাল নিয়েছেন জানতে চাইলে উত্তর না দিয়ে দ্রুত চলে যান তিনি।
অভিযুক্ত ডিলার পেয়ার হোসেন এভাবে চাল বিক্রির সত্যতা স্বীকার করে দাবি করেন, উপজেলার বিভিন্ন অফিসে অনেক খরচ, টেবিলে টেবিলে টাকা দিতে হয়। তিনি বলেন, ‘সরকারের নিয়ম অনুযায়ী চাল বিক্রি করলে খরচ কীভাবে দেব। খরচ না দিলে তো ডিলারশিপ থাকবে না। তাই বেশি দামে চালের বস্তা বিক্রি করতে হচ্ছে।’
ট্যাগ অফিসার শরিফুল্লা শামস বলেন, বেশি দামে চাল বিক্রির বিষয়টি জানেন না। বস্তায় কমতি থাকায় চাল মাপে ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম কম দিতে পারেন। খরচ দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সমীর চন্দ্র দেবনাথ বলেন, খাদ্য কর্মকর্তার অর্ডার পেলে ডিলারদের চাল দেওয়া হয়। ডিলার চাল নিয়ে কার কাছে বিক্রি করলেন, তা তাঁর জানার বিষয় নয়।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমার অফিসে কোনো কাজেই খরচ নেওয়া হয় না। সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চাল বিক্রি করা যাবে না। কোনো ডিলার সরকারের নীতিমালা না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাঁর বিরুদ্ধে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে হাবীবা মীরা বলেন, বেশি দামে চাল বিক্রি করলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত ডিলারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন