কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনে অনেকটা বিনা বাধায় চলছে পাহাড় কাটা। দিনে কম হলেও রাত ৮টা থেকে ভোর পর্যন্ত অনেকটা উৎসব আকারে চলে পাহাড় কাটা। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র পাহাড় কেটে মাটি ও বালু বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বিক্রি করছে। অভিযোগ উঠেছে, পাহাড় কাটার পুরো বিষয়টি সমন্বয় করছেন ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।

সম্প্রতি উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বদিকে নয়াপাড়ার রাজারবিল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ১০০ একর আয়তনের একটি পাহাড় কাটা হচ্ছে। ২৫০ ফুট উঁচু এ পাহাড়ের অর্ধেকের বেশি এরই মধ্যে কাটা হয়ে গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাকিটাও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে জানান স্থানীয়রা। তাঁদের অভিযোগ, স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিনের লোকজন পাহাড়টি কাটছে। শুধু এ পাহাড় নয়, চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের উচিতারবিল মৌজায় সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনে এভাবে অন্তত ১০টি পাহাড় কাটার কাজ চলছে। ২০০ থেকে ৩০০ ফুট উঁচু ও ১০০ থেকে ২০০ একর আয়তনের পাহাড়গুলোর তিনটি এরই মধ্যে সাবাড় হয়ে গেছে। স্থানীয় শহিদুল ইসলাম, বেলাল উদ্দিন, শামীম, মনছুর আলম, গিয়াস উদ্দিন ও রিদুয়ানের নেতৃত্বে একটি চক্র পাহাড় কেটে মাটি ও বালু বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বিক্রি করছে। আর পুরো কার্যক্রমটি সমন্বয় করছেন চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন।

তবে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে পাহাড় কাটা চলমান থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন চেয়ারম্যান। সমকালকে তিনি বলেন, ‘আমি কিংবা আমার কোনো আত্মীয় পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত নয়। তবে আমার ইউনিয়নের সদস্য কামাল হোসেনের নেতৃত্বে কিছু পাহাড় কাটা হচ্ছে।’

যদিও চেয়ারম্যানের এ অভিযোগ অস্বীকার করে কামাল হোসেন বলেন, এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে হয়তো অনেকেই চেয়ারম্যানের নাম ব্যবহার করে পাহাড় কাটতে পারেন। চেয়ারম্যান কিংবা তাঁর আত্মীয়স্বজন পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত কিনা, সেটা আমি বলতে পারব না। তদন্ত করলেই সব বেরিয়ে আসবে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে অন্তত ৮০০ একর রক্ষিত ও সংরক্ষিত বনে পাহাড় কাটা চলছে। এসব ভূমি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বন বিভাগের দুটি মামলার বিচার চলছে। এর মধ্যে প্রায় দেড়শ একর জমি নিয়ে করা একটি মামলায় বন বিভাগ পক্ষে রায় পেয়েছে। অন্য মামলাটি এখনও চলমান।

এদিকে সম্প্রতি ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কয়েকজন ব্যক্তি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিনসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক ফাইজুল কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে গিয়ে চার-পাঁচটি পাহাড় কাটার প্রমাণ পেয়েছি। শুনেছি আরও অন্তত ৪০ জায়গায় পাহাড় কাটা চলছে। এসব পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। পরিপূর্ণ তথ্যের জন্য আরও কয়েকবার ঘটনাস্থলে যাওয়া হতে পারে বলেও জানান তিনি।

সংরক্ষিত বনে পাহাড় কাটার বিষয়ে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, বিষয়টি জানা নেই। এখন শুনলাম। শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাদুজ্জামান বলেন, ওই এলাকায় পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে অন্তত ১০ বার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বেশ কিছু মেশিনও জব্দ করা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি।