- সারাদেশ
- ঢাবি ছাত্রলীগ নেতার ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’, ক্যাম্পাসে তোলপাড়
ঢাবি ছাত্রলীগ নেতার ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’, ক্যাম্পাসে তোলপাড়

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেন
অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অপমান করার অভিযোগ এনে এক ছাত্র আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন– এমন খবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ফেসবুকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে তোলপাড় চলছে। প্রথমে ছাত্রলীগের বহুসংখ্যক কর্মী উপাচার্যের বাসভবনের সামনের বিক্ষোভ করলে ঘটনা জানাজানি হয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এসএম এহসান উল্লাহ ধ্রুবকে পরে তাঁর মোবাইল ফোনের অবস্থান অনুযায়ী শহীদুল্লাহ হলের পুকুরপাড় থেকে উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তিনি এখন সুস্থ।
এহসানের দাবি, ব্যক্তিগত বিষয়ে অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান শ্রেণিকক্ষে তাঁকে অপমান করেছেন। তাই আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণবিষয়ক উপসম্পাদক।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি ফেসবুকে তানজীমউদ্দিন খানকে ‘থ্যাঙ্কস ফর কিলিং মি’ শিরোনামে মেইল করার একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করেন। মেইলে তিনি অভিযোগ করেন, তিনি ছাত্রলীগ করেন বলেই অধ্যাপক তাঁকে অপমান করেছেন। তাঁর সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।
পরে তাঁর খোঁজ না পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে ‘শিক্ষক আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছেন’ অভিযোগ তুলে সাড়ে ১২টার পর উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এ সময় তাঁরা ‘শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘শিক্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আমার ভাই নিখোঁজ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এর পর এহসানকে খুঁজে পাওয়া ও হাসপাতালে নেওয়ার ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ফেসবুকে লেখেন, ‘আমার ভাইয়ের কিছু হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ছাত্রলীগেরও রক্তের মূল্য আছে। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে রক্তের মূল্য আদায় হবে। জয় বাংলা।’
তবে তাঁর বিভাগের একাধিক সহপাঠীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এহসান গত বছর তাঁর ব্যাচের এক ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তিনি ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী। কয়েকদিন আগে বিভাগে ওই ছাত্রীর নামে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হয়। এ কারণে বৃহস্পতিবার এহসানকে শ্রেণিকক্ষে বকাঝকা করেন তানজীমউদ্দিন।
শুক্রবার রাতে এহসান সমকালকে বলেন, ‘ওই মেয়ে আমার নামে স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিল। আমি সেই বিষয়েই স্যারের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর রুমে গিয়েছি। স্যার আমার কথা শুনেছেনও। কিন্তু এর পরে আমাদের ক্লাসে এসে তিনি সবার সামনে আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে অপমান করেছেন। স্যার কাজটি ঠিক করেননি।’
ওই ছাত্রী সমকালকে জানান, এহসান রাস্তা আটকে বিভিন্ন সময়ে তাঁকে হেনস্তা করছিলেন। এ ছাড়া তাঁর নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং সহপাঠীদের কাছে নানা কথা ছড়িয়েছেন। বর্তমানে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এ বিষয়ে তিনি প্রমাণসহ প্রক্টর এবং বিভাগে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা ভাবছেন।
অভিযোগের বিষয়ে এহসান বলেন, ‘আমি মাঝেমধ্যে তার পথ আটকে শুধু জিজ্ঞেস করেছি আমার নামে এসব গুজব কেন ছড়াচ্ছিস। এর বাইরে সব মিথ্যা এবং বানোয়াট। আমি আর কিছুই করিনি।’
অধ্যাপক তানজীম বলেন, সে আমারই ছাত্র। সে একজন নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে অশ্লীল কথা বলেছে। এ ধরনের অশ্লীল প্রচারণা বন্ধ করা শিক্ষকের দায়িত্ব। আমি সেটিই পালন করেছি। ছাত্রীকে বিভিন্নভাবে হুমকিও দিয়েছে সে, অপবাদ ছড়িয়েছে। এটি তার ব্যক্তিগত বিষয় নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানী সমকালকে বলেন, বিভাগের চেয়ারপারসনকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি বিভাগের একাডেমিক কমিটি ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, এ নিয়ে শনিবার আলোচনা করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনে যা করার করবেন।
এ বিষয়ে এহসানের মা জাকিয়া সুলতানা সমকালকে বলেন, তিনি শিক্ষক হিসেবে দু-একটা কথা বলেছেন, তা ঠিক আছে। উঠতি বয়সের ছেলে, একটু আবেগি। তাই একটু বেশিই গায়ে নিয়ে নিয়েছে এবং কষ্ট পেয়েছে। আমি চাই না এটা অন্য খাতে যাক। আমি নিজেই গিয়ে স্যারের সঙ্গে কথা বলব।
মন্তব্য করুন