- সারাদেশ
- চমেক হাসপাতাল জুড়ে কান্না, আহাজারি
চমেক হাসপাতাল জুড়ে কান্না, আহাজারি

তিন মেয়ের সঙ্গে মো. ফরিদ।
তিন মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল ফরিদ-রাশেদা দম্পতির। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কদমরসূল এলাকায় ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেড’ কোম্পানির অক্সিজেন বোতল ভেলিভারি করে সংসার চালাতেন ফরিদ। কিন্তু ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনি এখন না ফেরার দেশে। সেইসঙ্গে নিমিষেই অন্ধকার নেমে এসেছে রাশেদা ও তার তিন মেয়ের জীবনে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাশেদা আক্তার। তার কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে হাসপাতালের চারপাশ।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেড’ প্ল্যান্টে ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দগ্ধ হয়েছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিস্ফোরণে কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ হারিয়েছেন আদরের ছেলে কিংবা ভাইকে। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে চমেক হাসপাতাল।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ফরিদের আত্মীয় আজম খান ও নাসির উদ্দিনকে দেখা যায় কান্নারত। আজম খান সমকালকে বলেন, ‘এ কী হয়ে গেল! ফরিদ ভাইয়ের তিন মেয়েকে নিয়ে তার স্ত্রী এখন কীভাবে চলবেন? ফরিদ ভাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল। তার সামান্য আয় দিয়ে চলতো পাঁচ সদস্যের সংসার। আর্থিক টানাপড়েন থাকলেও সংসারে সুখ ছিল। কিন্তু এখন তো সব শেষ হয়ে গেল।’
প্রায় এক যুগ ধরে মো. ফরিদ ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেড’ কোম্পানির অক্সিজেন বোতল ভেলিভারির কাজ করেছেন। ফ্যাক্টরির পাশের ফৌজদারহাটের বাংলাবাজার বেড়িবাঁধ এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। তার বড় মেয়ে তাসফিয়া পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে। মেজ মেয়ে তাসিফা পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। আর চার বছরের ছোট মেয়ে তাইফা।
প্ল্যান্টে এই বিস্ফোরণ অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস। শনিবার রাতে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দুর্ঘটনাস্থলে অনেক সিলিন্ডার দেখেছি। অনেক সময় সিলিন্ডারগুলো পরীক্ষা করা হয় না। বিস্ফোরণের অনেক কারণ থাকতে পারে। তদন্তে তা বোঝা যাবে। তবে সিলিন্ডার থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে আমরা মনে করছি।’
বিস্ফোরণের ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানান আবদুল মালেক।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে পুরো অক্সিজেন প্ল্যান্টটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণের পর আগুন লাগায় ধোঁয়া বহু দূর থেকে দেখা গেছে।
গত বছরের ৪ জুন এই অক্সিজেন প্লান্ট থেকে পৌনে এক কিলোমিটার দূরে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। ডিপোর কিছু কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণে দফায় দফায় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অন্তত ৫০ জন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হন।
মন্তব্য করুন