-samakal-6403b18d7058f.jpg)
কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় শুরু হয়েছে লালন স্মরণােৎসব। বাউল, ফকির, সাধু-গুরুদের সঙ্গে আখড়ায় সমবেত হয়েছেন অসংখ্য লালনভক্ত। শনিবার তোলা - সমকাল
‘আত্মতত্ত্ব যে জেনেছে/ দিব্যজ্ঞানী সেই হয়েছে,/ কু-বৃক্ষে সুফল পেয়েছে,/ আমার মনের ঘোর গেল না।’ আত্মতত্ত্বের মাহাত্ম্য আর মনের ঘোর দূর করার নিমিত্তে পূর্ণিমা তিথি ধরে এখনও প্রতি বছর সাঁইজি লালন ফকিরের বারামখানাখ্যাত কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে ছুটে আসেন বাউল ফকির, সাধু গুরুরা। নিজেদের মধ্যে চলে গান, ভাব ও ভালোবাসার ভাগাভাগি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মধ্য ফাল্গুনের এই মনোরম আবহাওয়ায় ছেঁউড়িয়ার বিখ্যাত আখড়াবাড়িতে ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে গতকাল শনিবার শুরু হয়েছে তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব। যে উৎসবে শুধু লালন অনুসারীরাই নন, একই সঙ্গে যোগ দিয়েছেন লালন গবেষক, আলোচক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমি এই স্মরণোৎসবের আয়োজন করেছে। সাধুসঙ্গ ছাড়াও উৎসবের অনুষ্ঠানমালায় থাকছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লালন মেলা।
গতকাল সন্ধ্যায় লালন স্মরণোৎসবের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সেলিম আলতাফ জর্জ, পুলিশ সুপার খাইরুল আলম প্রমুখ। প্রধান আলোচক ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান।
এ দিন আখড়াবাড়িতে গিয়ে দেখা যায় লালন ভক্ত ও বাউল ফকিরদের জমজমাট ভিড়। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সাদা কাপড় পরা লালন অনুসারীদের কেউ গান ধরেছেন, কেউবা ব্যস্ত নিজেদের মধ্যে নানা তত্ত্ব নিয়ে আলোচনায়। অনেক বাউল তাঁর সঙ্গিনীকে নিয়ে এসেছেন। লালন একাডেমির নিচের বসার জায়গায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ভেতরের মূল আঙিনা ছাড়িয়ে সামনের কালিগঙ্গা নদীর পাড় ঘেঁষে মাঠে অনেকে জায়গা করে নিয়েছেন।
লালনভক্ত ফকির মামুন বলেন, লালন ফকির জীবিত থাকতে প্রতি দোলপূর্ণিমায় গানের মচ্ছব বসাতেন। সেখানে তাঁর শিষ্যরা আসতেন। বাউলদের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় নিয়ে গুরু-শিষ্যের ভাববিনিময় হতো। এখন সেটা উৎসবে পরিণত হয়েছে।
মেহেরপুর থেকে আসা সিয়াম মাহমুদ জানান, তাঁরা ১৪ বন্ধু ঘুরতে এসেছেন উৎসবে। এক দিন অবস্থান করে বাড়ি ফিরবেন। এখানে লালনের গান শুনছেন, ফকিরদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। লালন একাডেমি জানিয়েছে, এবার বাউলদের জন্য নতুন টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। রাখা হয়েছে সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও চিকিৎসার সুযোগ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন এবং একাডেমি পুরো অনুষ্ঠানের সমন্বয় করছে। অনুষ্ঠানের খরচের জন্য ২৬ লাখ টাকায় মেলার মাঠ ইজারা দেওয়া হয়েছে। উৎসবে আসা বাউলদের জন্য তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। খাবারের নামেও বৈচিত্র্য আছে। সকালে চলে বাল্যসেবা, দুপুরে পূর্ণসেবা। দুপুরের খাবারে সাদা ভাত, মাছ, সবজি, ডাল আর দই দেওয়া হয়।
পুলিশ সুপার খাইরুল আলম জানান, লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষে লালন সাঁইজির সমাধি প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। লালন একাডেমির গোটা এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। পুলিশ, র্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন আছে।
মন্তব্য করুন