ভালুকা সরকারি ৫০ শয্যা হাসপাতালের প্রায় কোটি টাকা মূল্যের পরিত্যক্ত দুটি অ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘদিন খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে। এর একটির বডি রয়েছে। অপরটির বডিও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অ্যাম্বুলেন্স দুটির ইঞ্জিনসহ অন্য যন্ত্রপাতি সব খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

জানা গেছে, ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মুমূর্ষু রোগীদের জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা দিতে দূরের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বরাদ্দ পাওয়া একটি অ্যাম্বুলেন্স ১৯৯৮ সালে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। পরে পুরোনো অ্যাম্বুলেন্সটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন একটি বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু ১৯৯৮ সালে পরিত্যক্ত অ্যাম্বুলেন্সটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের সংগ্রহে না নিয়ে ভালুকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খোলা জায়গায় ফেলে রাখেন। তখন থেকেই অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্সটি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছনে নির্জন স্থানে পড়ে থাকার সুযোগে ইঞ্জিনসহ ভেতরের সবকিছু খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া ১৯৯৮ সালে বরাদ্দ পাওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় এক দশক আগে।

২০১২ সালে নতুন একটি বরাদ্দ দিয়ে পুরোনো অ্যাম্বুলেন্সটি একই কারণে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এই অ্যাম্বুলেন্সটিও অরক্ষিত অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর পেছনে নির্জন স্থানে পড়ে রয়েছে। বাইরে থেকে এটির চারটি চাকাসহ কিছু কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয় দৃশ্যমান থাকলেও ভেতরের অবস্থা জানা সম্ভব হয়নি। তবে পরিত্যক্ত হওয়া প্রথম অ্যাম্বুলেন্সটির ইঞ্জিনসহ ভেতরের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি না থাকার বিষয়ে জানা নেই বলে দাবি করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ জানান, ভালুকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উত্তর পাশে একটি ঘন বসতি এলাকা রয়েছে। তাঁদের বাইরে যাওয়ার বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় যুগ যুগ ধরে সরকারি হাসপাতালের ভেতর দিয়ে চলাচল করে আসছেন। আগে হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ সীমানা প্রাচীর ছিল না, তাই তাঁরা অনায়াসেই যাতায়াত করতে পারতেন। সরকারি হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ সীমানা প্রাচীর নির্মাণের পর তাঁদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। বর্তমানে সীমানা প্রাচীর ডিঙিয়ে চলাচল করেন তাঁরা। এ কারণে অরক্ষিতই রয়ে গেছে হাসপাতালটি। তাঁর ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে দুটি অ্যাম্বুলেন্স খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে। এমন অবস্থায় এমন ক্ষতি স্বাভাবিক। কর্তৃপক্ষ এগুলো স্থানান্তর করলে সরকারি সম্পদের এমন ক্ষতি হতো না।

হাসপাতালের ভেতর দিয়ে পেছনের অংশের একটি ঘনবসতির লোকজন যাতায়ত করার কথা স্বীকার করেন পৌর মেয়র ডা. একেএম মেজবাহ উদ্দিন কাইয়ুম। তিনি বলেন, ‘তাঁদের যাতায়াতের সমস্যা দীর্ঘদিনের। বারবার চেষ্টা করেও বিকল্প যাতায়াত ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ আমরা। তবে এ সমস্যা দ্রুতই সমাধান হবে বলে আশা করছি।’

ভালুকা ৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. জয় শংকর জানান, বর্তমানে হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্স সচল থাকলেও চালক আছে একজন। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে পরিত্যক্ত অ্যাম্বুলেন্স দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে জানা নেই।

বিষয়টি জানতে চাওয়া হয় ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হাসানুল হোসেনের কাছে। তিনি সমকালকে বলেন, পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা অ্যাম্বুলেন্স দুটি দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে পড়ে রয়েছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিত্যক্ত বিভিন্ন গাড়ির নিলাম প্রক্রিয়ার আওতায় অ্যাম্বুলেন্স দুটি রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার ভালুকা ৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেই বলে দাবি তাঁর।