বরিশাল নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিমের ফিশারি থেকে দক্ষিণে মহানগর কলেজ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই ভাঙা। খানাখন্দের কারণে যানবাহন দূরে থাক, হেঁটে চলাও দায়। ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুজাহার ভূঁইয়া বলেন, বেহাল দশা ৫ থেকে ৬ বছর, কারও নজর নেই। সরবরাহ লাইন না থাকায় পানির দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

সরেজমিনে একই অবস্থা নগরীর ২৭, ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের করমজা এলাকার বাসিন্দা জাকির হাওলাদার বলেন, ওয়ার্ডের সব সড়ক চলাচলের অনুপযোগী। সড়কবাতি জ্বলে না, রাতে চলাফেরা করতে ভয় লাগে। বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ সড়ক জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়। ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বলেন, সন্ধ্যার পর মশার যন্ত্রণায় টেকা দায়। নগরবাসীর সুবিধা-অসুবিধা দেখার কেউ আছে বলে মনে হয় না। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুবেল হাওলাদার বলেন, কাশিপুর চৌমাথা থেকে দক্ষিণে শোলনা বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক হলেও দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি। রাতে চলতে গেলে গা ছমছম করে। প্রায়ই মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন।

নগরীর চারটি ওয়ার্ডের কোথাও ভালো সড়ক চোখে পড়েনি। বাসিন্দারা নিয়মিত পানি পান না। মশার ওষুধ ছিটানো হয় না। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিয়মিত ট্যাক্স দিলেও কোনো সেবা তাঁরা পান না। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নগরের উন্নয়নে কোনো মাস্টারপ্ল্যান করেননি। উচ্চাভিলাষী বিভিন্ন প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ায় অনুমোদন হয় না। বরাদ্দ না পাওয়ায় নগরবাসীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারেননি তিনি।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সরবরাহ লাইন স্থাপন করা হয়নি। সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় ওয়াটার প্লান্টের মতোই মুখ থুবড়ে পড়ছে সড়ক উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, খাল খননসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী সমকালকে বলেন, গত ৫ বছরে বরিশাল নগরে কোনো উন্নয়ন হয়নি। বিপরীতে বাড়ানো হয়েছে ট্যাক্সের বোঝা। অদক্ষ মেয়রের কারণে একমাত্র সিটি করপোরেশন হিসেবে বরিশালই সরকারি কোনো বরাদ্দ পায়নি। নগরবাসীকে বঞ্চিত করার দায় তাঁকেই নিতে হবে।

জাতীয় পার্টির বরিশাল মহানগর শাখার সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, স্বেচ্ছাচারিতা ও একনায়ক মনোভাবের কারণে মেয়র সাদিক নগর পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশালের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, বরিশালকে সিঙ্গাপুর বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মেয়র। অথচ বিগত পাঁচ বছরে তিনি এটিকে তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভায় পরিণত করেছেন।

এ বিষয়ে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বরাদ্দ না পাওয়ার কথা স্বীকার করে প্যানেল মেয়র-১ গাজী নঈমুল ইসলাম লিটু সমকালকে বলেন, নগরবাসী উন্নয়নবঞ্চিত– এ কথার সঙ্গে আমি একমত নই। করোনা পরিস্থিতিতে দুই বছর কিছু করা যায়নি। কিন্তু রাজস্ব থেকে আসা অর্থে উন্নয়ন দৃশ্যমান। সরকারি সহায়তা ছাড়াই উন্নয়ন করে মেয়র দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি আরও বলেন, নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ৫ বছর মেয়াদে টেকসই চুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে। ১১টি সেতু ও কালভার্ট এবং ড্রেনসহ একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে।