- সারাদেশ
- পরনের কাপড়ে চেনা গেল মরদেহটি সেলিমের
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ
পরনের কাপড়ে চেনা গেল মরদেহটি সেলিমের

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শনিবার অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের পর উদ্ধার তৎপরতা। হতাহতের খবরে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমায় ঘটনাস্থলে। এ সময় অনেককে আহাজারি করতে দেখা যায় - সমকাল
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত করা গেলেও একজনের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। বিস্ফোরণে মুখমণ্ডল পুরোটাই বিকৃত হয়ে যায়। রক্তমাখা হয়ে যায় পরনের কাপড়। যে কারণে অনেকে দেখতে এলেও মরদেহ শনাক্ত করতে পারেননি। পরে ওই ব্যক্তির মরদেহ অজ্ঞাতপরিচয়ে মর্গে রাখা হয়।
এদিকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও স্বামীর কোনো হদিস না পেয়ে রোববার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে ছুটে আসেন লিলি মারাথ। মর্গে এসেই সেই মরদেহের পরনে থাকা শার্ট দেখেই লিলি মারাথ বিলাপ করতে করতে বলে উঠেন- ‘এটা আমার স্বামী সেলিম রিচিল।’ মরদেহ শনাক্তের পর তার স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে চমেক হাসপাতালের চারপাশ।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সেলিম রিচিল সীমা কারখানার একজন কর্মী ছিলেন। বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। বিস্ফোরণের খবর পেয়ে তার স্বজনরা কখনও কারখানায়, কখনও আশপাশের এলাকায় ও স্থানীয় মেডিকেলে ছুটে যান। তার সহকর্মী ও পরিচিত অনেকের কাছেও যান তারা। কিন্তু কোথাও মিলেনি সেলিমের খোঁজ। কোথাও কোনো খোঁজ না পেয়ে রোববার চমেক হাসপাতালে ছুটে আসেন নিখোঁজ সেলিমের স্ত্রী লিলি মারাথ।
পুলিশ ও হাসপাতাল প্রশাসনকে স্বামীকে খুঁজে না পাওয়ার কথা বলার পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের হিমাগারে। আর সেখানে গিয়েই ঘটনার দিন সকালে পরে যাওয়া শার্ট দেখেই সেলিমের মরদেহ শনাক্ত করেন তিনি। বিলাপ করতে করতে লিলি মারাথ বলেন, ‘বিস্ফোরণে তার চেহারা বিকৃতি হলেও আমি তো ওর স্ত্রী। আর কেউ না চিনলেও তার শরীরে পরনে থাকা শার্ট তো আমিই চিনবো। শার্টটি তার খুব পছন্দের ছিল। সেদিন সেই শার্টটি পরেই তিনি কারখানায় গিয়েছিলেন। ‘আমার এ কী হয়ে গেলো? আমার সন্তানরা এখন কাকে বাবা ডাকবে? বাবার আদর-ভালোবাসা ও স্নেহ-মমতা পাবে কার কাছে?’ এভাবে বলতে বলতে বারবার মূর্ছা যান তিনি।
৩৮ বছর বয়সী সেলিম রিচিলের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন সীতাকুণ্ডে। তার সামান্য আয় দিয়েই চলতো পুরো পরিবার। স্ত্রী লিলি মারাথের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাট এলাকায়।
সেলিম রিচিলের এক সহকর্মী বলেন, ঘটনার আগে কারখানা থেকে তার কয়েকজন সহকর্মী পাশের দোকানে নাস্তা করতে বের হওয়ার সময় তাকেও বের হতে বলেন তারা। কিন্তু সেলিম বের হননি। সেলিম সহকর্মীদের বলে-‘হাতে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়ে গেছে। সেগুলো শেষ করেই বের হচ্ছি। আর ততক্ষণে ঘটে বিস্ফোরণের ঘটনা। আমাদের সঙ্গে বের হলে এত বড় বিপদ হতো না। এখন কাকে সেলিম বলে ডাকবো? নানা কথা শেয়ার করবো?
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, নিহত ছয়জনের সবার পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। সর্বশেষ শনাক্ত হওয়া সেলিম রিচিলসহ এই ঘটনায় নিহত অন্য পাঁচজন হলেন- শামসুল আলম (৫০), মো. ফরিদ (৩৬), রতন লকরেট (৪৫), আব্দুল কাদের (৫০) ও মো. সালাহউদ্দিন (৩৫)। এ ঘটনায় আহত ১৮ জন হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। এদের মধ্যে দুইজন আছেন আইসিইউতে।
চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক বলেন, আহতদের মধ্যে মো. রিপন ও নূর হোসেন নামে দুইজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
মন্তব্য করুন