নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘সারা বাংলাদেশে ৬৪ জেলা। দেশের অন্য সব জেলা চলে এক রকমভাবে। আর নারায়ণগঞ্জে চলে ওসমানীয় রাজত্ব। প্রশাসন এখানে কিছু না। যেভাবে প্রেসক্রিপশন দেওয়া হয় ঠিক সেভাবে এখানে কাজ হয়। আমি বুঝতে পারি না, এখানে যারা প্রশাসনের লোক আসেন তারা কার হুকুম পালন করেন। সরকারের না স্থানীয় গডফাদারদের।’

তিনি বলেন, ‘শহরে যানজট, শহরে হকাররা রাস্তা দখল করে নিয়েছে, হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, রাস্তার দখল নিয়ে হকাররা এক হকারকে রাস্তার ওপরেই মেরে ফেলেছে অথচ সেই হকার নেতা আবার আমাদের নেতার পাশে দাড়িয়ে বক্তৃতা শোনেন। পুরো শহর হয়ে গেছে ওসমানীয় সাম্রাজ্য। সেই সাম্রাজ্যের মধ্যে বসবাস করে ত্বকী মঞ্চের কতিপয় মানুষ। এই শহরের সমস্ত মানুষকে একত্রিত করে যেভাবে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে, আমার মনে হয় ওসমানীয় সাম্রাজ্যের আর বেশি দিন নেই। অত্যাচারীদের, হত্যাকারীদের মসনদ খুব তাড়াতাড়ি ধ্বসে পড়বে ইনশাল্লাহ।’

সোমবার বিকেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার দশম বার্ষিকী উপলক্ষে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী মফিদুল হক, জেলা খেলাঘর আসরের সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচীব কবি হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল প্রমুখ।

বক্তব্যে মেয়র আরও বলেন, ‘একাত্তরের পর থেকে আজ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহরে হত্যার রাজনীতি দেখে আসছি। সে হত্যা কেন, কারা, কীভাবে করেছে তা এ শহরের মানুষ জানে। নারায়ণগঞ্জকে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার জন্য, মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য, নিজেদের জুলুম প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এ শহরের মানুষ জেগে উঠেছে। এখন এ শহরের মানুষ চাইতে পারে, কথা বলতে পারে, খুনিকে খুনি বলতে পারে। আগে এ সাহসটা ছিলো না। হরণ করা হয়েছিলো। এ শহরকে ভূতের রাজ্য বানানো হয়েছিলো, সন্ত্রাসের রাজত্ব বানানো হয়েছিলো। এমন ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিলো যে, মানুষ ভয়ে কথা বলতো না। ত্বকী আমাদের শিখিয়ে গেছে কীভাবে প্রতিবাদ করতে হয়। দশ বছর ধরে ত্বকী মঞ্চ ধারাবাহিকভাবে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। প্রতিমাসে ত্বকী মঞ্চ মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে যাচ্ছে। শেখ রাসেল হত্যার বিচার তার দু’বোন চেয়েছিলেন এবং সে বিচার বাংলার মাটিতে হয়েছে। আমি আশাবাদী মানুষ। আমি মনে করি, ত্বকী হত্যার বিচার নারায়ণগঞ্জের মানুষ একদিন করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মার্চ মাস আসলেই তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। তারা পাগল হয়ে যায়। কী যে করবে তাদের কোনো হুশ থাকে না। সত্যকে চাপা দেওয়ার জন্য একশ মিথ্যা সামনে এনে দাঁড় করায়। এই মিথ্যা তারা শুরু করেছে ১৯৯৬ সাল থেকে। আশ্চর্য লাগে তাদের পোষা কুকুররাও কীভাবে মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে টাকার বিনিময়ে। তবে সবকিছুর অবসান হবে। এ শহর পজিটিভ শহর। নারায়ণগঞ্জ সারা দেশের মধ্যে সমৃদ্ধশালী জেলা। সোনারগাঁয়ের জন্য আমরা বিখ্যাত, আদমজী জুট মিলের জন্য আমরা বিখ্যাত, শীতলক্ষ্যার পানির জন্য আমরা বিখ্যাত ছিলাম। আমাদের কী ছিলো না। কিন্তু এদের জন্য নারায়ণগঞ্জকে সারা বাংলাদেশে সন্ত্রাসের শহর হিসেবে চেনে। আমরা এ ধারণা বদলে দিতে চাই।’

অনুষ্ঠানে মফিদুল হক বলেন, যারা ত্বকী মঞ্চের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের জন্য একটি বার্তা নারায়ণগঞ্জের শিশুরা দিচ্ছে। যারা ত্বকীকে দেখেনি তারা ত্বকীর ছবি আঁকছে। নারায়ণগঞ্জবাসীর হৃদয়ে ত্বকীর ছবি আঁকা হয়ে গেছে। যারা দুর্নীতি করে, লুটপাট করে, যারা হত্যা করে তারা আওয়ামী লীগের দল হিসেবে দাবি করতে পারে না। দলের নাম করে ত্বকী হত্যাকারীরা পার পেয়ে যেতে পারে না। মুষ্টিমেয় কিছু ব্যাক্তির জন্য এ দলের ঐতিহ্য পদদলিত হচ্ছে। দলের নাম নিলেই কেউ দলের প্রবক্তা হয়ে যায় না। মুক্তিযুদ্ধের বার্তা বাহকদের সামনে নিয়ে আসার যে তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে সে তাগিদ থেকেই ত্বকী হত্যার বিচার আপন পথে চলতে দেওয়া উচিৎ।’