তামাম বিশ্ব কাঁপিয়ে দেওয়া করোনাভাইরাস এখনও একেবারে দূর হয়নি। তবে দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বেশ স্বস্তিদায়ক। এক মাসের বেশি সময় ধরে নতুন রোগী শনাক্তের হার ১ শতাংশের নিচে। অন্য দেশের চেয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও টিকাদান কর্মসূচিতে সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে দেশের ৮১ শতাংশ মানুষ টিকার পূর্ণ ডোজ পেয়েছে। এতে টিকাদানে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বাংলাদেশে গরম আবহাওয়ায় করোনা সংক্রমণ বাড়ে। সে হিসেবে যে কোনো সময় সংক্রমণ বাড়তে পারে। ফের যদি নতুন ধরন আসে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা শিথিল করা হয়– তাহলে নতুন করে সংকটের আশঙ্কা থেকেই যায়। ফলে মহামারি শেষ হয়েছে– এ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া আটকে রাখা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মানার অভ্যাসটা ধরে রাখতে হবে।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। সে হিসাবে আজ মঙ্গলবার শনাক্তের তিন বছর পূর্ণ হলো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে ১৫ কোটি ৮১ লাখ নমুনা পরীক্ষা করে গতকাল সকাল পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭১ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৫৫ জনের। গত রোববার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৬ জন; করোনা আক্রান্তদের মধ্যে কারও মৃত্যু হয়নি। এ ছাড়া গত তিন বছরে দেশে করোনার প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছে ১৫ কোটি ৬০ লাখ আট হাজার মানুষ। দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছে ১৩ কোটি ৭১ লাখ মানুষ। তৃতীয় ডোজ ৬ কোটি ৭৩ লাখ এবং ৩ কোটি ১৪ লাখ মানুষ চতুর্থ ডোজ পেয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, সর্বশেষ ১ মার্চ পর্যন্ত বৈশ্বিকভাবে করোনা সংক্রমণ আগের মাসের চেয়ে কমেছে। তবে সংক্রমণের চেয়ে মৃত্যুর হার ১৮ শতাংশের বেশি। মৃত্যু বেশি হচ্ছে ইরান, যুক্তরাজ্য ও ক্রোয়েশিয়ায়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে।

দেশে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল সোমবার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সমকালকে বলেন, যে কোনো সময় আবার বাড়তে পারে সংক্রমণ। তবে নতুন ধরন না এলে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হবে না। গত তিন বছরে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ করোনার টিকা নিয়েছে। এতে সংক্রমণ ঠেকানো না গেলেও গুরুতর অসুস্থ হওয়া অনেকটাই ঠেকানো যাবে, মৃত্যু কম হবে। তবে বয়স্ক জনগোষ্ঠী ও অন্য রোগে আক্রান্তদের ঝুঁকি থেকেই যায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলায় আমাদের যে অর্জন, তা মধ্যম মানের। আমাদের দুর্বলতা এখনও সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি; যেভাবে চীন, জার্মান, কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর করেছে। তবে আমাদের মধ্যে যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, এটি ধরে রাখতে হবে।

জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, বিশ্ব থেকে এখনও করোনা সংক্রমণ যায়নি। আমাদের দেশেও এটি রয়েছে। যে কোনো সময় ধরন পরিবর্তন করে আবার আঘাত হানতে পারে। করোনার মতো অন্য ভাইরাসও আসতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা পালন করছে সফল
টিকাদান কর্মসূচি।