আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’ প্রতিপাদ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশে নারীদের উন্নতি হলেও দেশের প্রান্তিক এবং হতদরিদ্র নারীরা জানেনই না নারী দিবস কী! নারী দিবস উপলক্ষে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন নারী সংগঠন ও এনজিও’র উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলেও প্রান্তিক ও হতদরিদ্র নারীদের ক্ষেত্রে এসব কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে কিশোরগঞ্জের আলোচিত পাগলা মসজিদের সামনে দেখা যায়, কয়েকজন হতদরিদ্র নারী মসজিদের পাশে বসে ভিক্ষা করছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সঙ্গে তাদের কেউ পরিচিত নন। তাদের প্রত্যেকের ভাষ্য, ভিক্ষা করলেই তাদের পেট চলে। এসব দিবস সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না।

ভিক্ষার আশায় পাগলা মসজিদ সংলগ্ন সেতুর ওপর বসে থাকা ভিক্ষুকদের প্রায় সবার বয়স ৫০ থেকে ৬৫ বছর। একজনের বয়স ৩০ বছর। এদের মধ্যে সদর উপজেলার কাতিয়ারচরের মেহেরা স্বামী হারিয়েছেন আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে। তার কোনো সন্তানাদিও নেই। সদর উপজেলার ঠাডাপড়া গ্রামের হামিদার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। সদর উপজেলার বড়বাগ এলাকার নাসিমার স্বামী আবু বকর সিদ্দিক শারীরিকভাবে অচল।

এদিকে সদর উপজেলার বৌলাই এলাকার জালু মিয়া রুবিনাকে বাচ্চাসহ রেখে অন্যত্র চলে গেছেন। করিমগঞ্জের আইলা গ্রামের সাফিয়ার স্বামী মেনু মিয়া অন্যত্র বিয়ে করে তাকে ছেড়ে দিয়েছেন। তার ছেলে থাকলেও খোঁজ নেয় না। হোসেনপুরের পুমদী এলাকার ফাতেমাকে ৩ মাসের গর্ভবতী রেখে স্বামী চলে গেছেন। তার ছেলে ফালানের বয়স এখন ৩ বছর।

পাশ্ববর্তী ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুসুল্লি এলাকার আনোয়ারার স্বামী তাহের উদ্দিন মারা গেছেন। আর নান্দাইলের জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের মল্লিকা বেগমের স্বামী মুর্শিদ মিয়া মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। বিপদে পড়ে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

নারী দিবস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, ‘কিসের দিবস বাবা। আমরা তো ভিক্ষা করি। ভিক্ষা করলে আমাদের পেট চলে।’ তারা জানান, দৈনিক দেড়শ থেকে ২০০ টাকা ভিক্ষা পান। এ টাকা দিয়েই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে তাদের চলতে হয়।

এদিকে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান খান জানিয়েছেন, সমাজকে ভিক্ষুকমুক্ত করার লক্ষ্যে সরকারের ‘ভিক্ষুক পুনর্বাসন বিকল্প কর্মসংস্থান’ নামে একটি কর্মসূচি রয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় যেসব ভিক্ষুক ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে আসার অঙ্গীকার করবেন, তাদের পুনর্বাসন করা হয়।

তিনি জানান, কাউকে মুদি দোকানের পুঁজি দিয়ে, কাউকে হাঁসমুরগি পালনের পুঁজি দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে সহায়তা করা হয়। প্রত্যেক উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি আছে। তাদের মাধ্যমেই ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে।

এই কর্মসূচির আওতায় জেলার প্রায় ৭০০ ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, অনেকে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে আসতে চান না। কারণ ভিক্ষা করে কম কষ্টে বেশি আয় করা যায় বলে মনে করেন তারা।