চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে পাস করে অনেক দিন চাকরি খুঁজছিলেন রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের মীর বাগিচা গ্রামের আজিজুল হক রিন্টু। গত ১৮ জানুয়ারি রেলে পয়েন্টসম্যান হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। কিন্তু চাকরির মাত্র ৪৮ দিনের মাথায় দায়িত্বরত অবস্থায় বেপরোয়া বাস কেড়ে নিয়েছে তাঁর প্রাণ। মৃত্যুর আগে এত কষ্ট করে পাওয়া চাকরির বেতনটাও হাতে নিতে পারেননি তিনি। 

গত সোমবার রাতে চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার বিমানবন্দর সড়কের গুনখালী এলাকায় মেঘনা অয়েলের সামনে চলন্ত ট্রেনের ইঞ্জিনে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় নিহত হন আজিজুলসহ তিনজন। ট্রেনের ইঞ্জিন আসার সময় পয়েন্টসম্যান আজিজুল বাসটিকে থামতে সংকেত দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস সেই সংকেত উপেক্ষা করে আজিজুলকে চাপা দিয়ে ট্রেনের ইঞ্জিনে ধাক্কা দেয়। আজিজুল মীর বাগিচা গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে। 

এদিকে আজিজুলকে হারিয়ে তাঁর বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে। মাঝেমধ্যে জ্ঞান হারাচ্ছেন তাঁর মা। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, রেলের পয়েন্টসম্যান পদে চাকরি পেলেও আরও ভালো চাকরির আশায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন আজিজুল। ২ মার্চ সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি আরও অফিসে চাকরির জন্য লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন। আজিজুলের স্বপ্ন ছিল, ভালো একটা চাকরি পেলে বিয়ে করে সংসারী হবেন। 

বাসচাপায় মারা যাওয়ার ঘটনায় কোনো আইনি ব্যবস্থা নেবে না বলে জানিয়েছে আজিজুলের পরিবার। কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যাওয়ায় রেলওয়ের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁর ভাই আমিনুল হক মিন্টু।

এদিকে পয়েন্টসম্যান আজিজুল হক নিহত হওয়ার ঘটনায় গত মঙ্গলবার বিক্ষোভ করেছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মচারীরা। ওই দিন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রাম সিআরবিতে মিছিল করেন তাঁরা। এ সময় কর্মচারীরা আজিজুল নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মামুন বলেন, আজিজুল হক চাকরিতে যোগ দিয়েছেন বেশিদিন হয়নি। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আমরা তাঁর পরিবারের পাশে থাকতে চাই।