গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ট্রাকবোঝাই গরু ডাকাতির ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। মঙ্গলবার ঢাকার ডেমরার সারুলিয়া বাজার ও রূপগঞ্জের কর্ণগোপ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় ট্রাক ও ১৯টি গরু। সোমবার ভোরে রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের এশিয়ান হাইওয়ে ফ্লাইওভার এলাকা থেকে ১৫টি গরুসহ ওই ট্রাক ছিনিয়ে নিয়ে পালায় ডাকাতরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গরু ব্যবসায়ী জমির হোসেন বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায়।

জমির হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকার নুরনবী, মোবারক ব্যাপারী, জলিল মিয়া, রিমনকে নিয়ে গরুর ব্যবসা করে আসছেন। রোববার বিকেলে দিনাজপুরের রাণীশংকৈলের মুরাদহাট থেকে তাঁরা ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় ১৫টি গরু  কিনে ট্রাকে করে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা হন। সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইলে এশিয়ান হাইওয়ে ফ্লাইওভার অতিক্রমের সময় ৭-৮ সশস্ত্র ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মতো লেজার লাইটের সিগন্যাল দিয়ে গরুবাহী ট্রাক থামায়। ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা ট্রাকচালকের কাগজপত্র তল্লাশি শুরু করে। 

মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গরু ব্যবসায়ী, ট্রাকচালক ও সহকারীকে টেনেহিঁচড়ে মাইক্রোবাসে তুলে হাত-পা বেঁধে ফেলে ডাকাতরা। পরে গরুবোঝাই ট্রাক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ডাকাতরা ভুক্তভোগীদের সোনারগাঁয়ের তলাতলা এলাকায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মাইক্রোবাস থেকে ফেলে পালিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, জমির হোসেনের অভিযোগ পাওয়ার পরপরই রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ ও পরিদর্শক আতাউর রহমানের নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়। ওসির নেতৃত্বাধীন দল রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকা থেকে  চিহ্নিত ডাকাত তোফা মীর শাওন ও নাদিম হাসান আনিসকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, গরুগুলো তারা রাজধানীর ডেমরার সারুলিয়া বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মোজাম্মেলের কাছে বিক্রি করেছে। পরে মঙ্গলবার ভোরে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জুয়েল, কাউছার, ফরহাদ, মোজাম্মেলকে। ওই ব্যক্তিরা ডেমরা, রূপগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় থাকে। এ সময় উদ্ধার করা হয় ১৯টি গরু ও ট্রাক। এর মধ্যে চারটি গরু অন্য এলাকা থেকে ডাকাতি করা হয়েছিল।

ওসি এএফএম সায়েদ বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা এ ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মহাসড়কে ডিবি পুলিশ ও র‍্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করত। এদের মূল টার্গেট গরু ও পণ্যবাহী ট্রাক এবং বিদেশফেরত যাত্রী। এ ছাড়া অন্যান্য যানবাহনেও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে লুটপাট চালিয়ে আসছিল তারা।

পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় পাঁচ-ছয়টি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে।