ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এমপি মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ শটগানের গুলি, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উপজেলার তুজারপুর গ্রামে এই সংঘর্ষ হয়। 

সংঘর্ষে আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন ইউসুফ ভূঁইয়া, শেখ শহীদ ও আমিনুর ভূঁইয়া। এ ছাড়া পুলিশের এসআই জুয়েল মিয়া, আলমগীর, খলিল, কনস্টেবল মো. ফুরকান, আব্দুল আহাদ, কামরুল ইসলাম ও শিপন সরদার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহত অন্যরা বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শবেবরাতের রাতে তুজারপুর গ্রামের একটি মসজিদে নামাজ পড়া নিয়ে গিয়াস উদ্দিনের ছেলের সঙ্গে প্রতিপক্ষের কাউসার মোল্লার ছেলের ঝগড়া হয়। এর জের ধরে পরদিন বুধবার সন্ধ্যায় তুজারপুর গ্রামের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামরুল শেখের বাড়িতে বৈঠক হয়। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শটগানের গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে রাত সাড়ে ৩টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। দু’পক্ষের ৮০০ থেকে ৯০০ লোক সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। 

স্থানীয়রা জানান, এই গ্রামে এমন ঘটনা নতুন নয়। ওয়াহাব ভূঁইয়ার পক্ষের আবুল কালাম দুলু, ইউপি সদস্য কামরুল শেখ, মো. মাওলাদাত ও জাহাঙ্গীর মাতব্বরের লোকজন তাদের প্রতিপক্ষ একই গ্রামের ওমর মাতুব্বর, জাহিদ মোল্লা, মোষা মোল্লা, ওমর মাতুব্বর, কাউসার মোল্লা, মজিবর মাতুব্বরের লোকজনের সঙ্গে প্রায়ই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। তারা সবাই ফরিদপুর-৪ আসনের সতন্ত্র এমপি নিক্সন চৌধুরীর সমর্থক। 

ওয়াহাব ভূঁইয়া ও আবুল কালাম দুলু দাবি করেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁদের ওপর হামলা করেছে। ওমর মাতুব্বরের ছেলেসহ তাদের দলের অনেকেই চিহ্নিত মাদক কারবারি ও প্রতারক। তাদের অপকর্মের বিষয়ে কথা বলতে গেলেই হামলার শিকার হতে হয়। অপর পক্ষের ওমর মাতুব্বর ও জাহিদ মোল্লা জানান, তাঁরা প্রতিপক্ষকে বিরোধের বিষয়টি মীমাংসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন; কিন্তু তাঁরা রাজি হননি। বরং হামলাসহ বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন। 

ভাঙ্গা থানার ওসি জিয়ারুল ইসলাম জানান, মসজিদে নামাজ পড়া নিয়ে দুই তরুণের মধ্যে সামান্য ঝগড়া হয়। এ নিয়ে বুধবার রাত থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ২৫টি ঢাল, সাড়ে ৫০০ শড়কি ও পাঁচটি রামদা জব্দ করেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া সমকালকে জানান, সংঘর্ষে জড়িত দুই পক্ষের মূল হোতা ও এক জনপ্রতিনিধিসহ ১১ জনকে আটক করা হয়। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দেয়নি।