- সারাদেশ
- তিস্তায় নাব্য সংকট, ২০ রুটে নৌ-চলাচল বন্ধ
তিস্তায় নাব্য সংকট, ২০ রুটে নৌ-চলাচল বন্ধ

নাব্যতা সংকটে বেকার বসে আছেন নৌ-শ্রমিকরা। ছবিটি মঙ্গলবার সুন্দরগঞ্জের বেলকা খেয়াঘাট থেকে তোলা- সমকাল
উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও পলি জমে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে তিস্তা নদীতে। দীর্ঘদিন নদী খনন ও শাসন না করায় গতিপথ পরিবর্তন হয়ে এক সময়ের খরস্রোতা তিস্তা এখন প্রায় মরা খাল। ২০ রুটে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছেন হাজারো নৌ-শ্রমিক ও জেলে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, শান্তিরাম, কঞ্চিবাড়ি, চণ্ডীপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী দীর্ঘ ৫২ বছরেও খনন করা হয়নি। সে কারণে তিস্তা ভরাট হয়ে এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। গতিপথ পরিবর্তন করে তিস্তা এখন অসংখ্য শাখা নদীতে রূপ নিয়েছে। বছরে মাত্র ছয় মাস মূল নদীতে নৌকা চলাচল করে। গোটা বছর হেঁটে পারাপার হন চরবাসী।
উপজেলার পাঁচপীর, বেলকা, মীরগঞ্জ ও তারাপুর খেয়াঘাট থেকে পীরগাছা, কাউনিয়া, উলিপুর, কুড়িগ্রাম, কাশিমবাজার, চিলমারী, রৌমারী, মোল্লার চর, ভূরুঙ্গামারী, দেওয়ানগঞ্জ, কামারজানি, গাইবান্ধা, সাঘাটা, ফুলছড়ি, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, বালাশিঘাট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ রুটে নৌ-চলাচল করত। নাব্য সংকটে সব রুটে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন হাজারো নৌ-শ্রমিক ও জেলে। তাঁরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন অনেকে।
বেলকা চরের জেলে ভোলারাম দাস বলেন, তিস্তা নদীতে এখন আর জল থাকে না। পলি জমে নদী ভরে গেছে। নদীতে মাছ ধরার কোনো সুযোগ নেই। ১৫ বছর ধরে আমরা তিস্তা নদীতে মাছ ধরতে পারি না। সে কারণে অনেকে রিকশা, ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি।
হরিপুর চরের নৌ-শ্রমিক রিয়াজ মিয়া জানান, ১০ বছর আগে তাঁর পাঁচটি নৌকা ছিল। এ ব্যবসা করেই সংসার চলত। এখন মাত্র একটি নৌকা। সেটিও বছরের চার মাস মূল নদীতে চলাচল করে। বাকি সময় অন্য কাজ করতে হয়। কাজ না পেলে বেকার বসে থাকেন।
বাদামের চরের ব্যবসায়ী আনছার আলী জানান, জেলা-উপজেলা শহর থেকে কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামের চরের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বিভিন্ন যানবাহনে জেলা-উপজেলা শহর থেকে মালপত্র এনে ব্যবসা করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ঘোড়ার গাড়ি বা হাঁটা ছাড়া অন্য উপায়ে চরের মধ্যে চলাচল করা যায় না। অথচ এ পথেই আজ থেকে ১৫ বছর আগে নৌকায় মালপত্র আনা-নেওয়া করা হতো।
তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, তিস্তা এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। উজানের পলি জমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে অসংখ্য শাখা নদীতে রূপ নিয়েছে। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ২০ রুটে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তাই নদী খনন এখন সময়ের দাবি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল মারুফ জানান, তিস্তা নদীর নাব্য সংকট নিরসনে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নদী সংরক্ষণ এবং খননের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, নদী রক্ষায় ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দের অপেক্ষায় রয়েছে। নাব্য সংকট দূর করতে নদী খননের জন্যও বহুবার আবেদন পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের আদেশ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।
মন্তব্য করুন