যশোর পৌরসভায় চার বছর আগে চালু করা হয় দেশের প্রথম আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট। সদর উপজেলার হামিদপুরে স্থাপিত প্লান্টটি নির্মাণে খরচ হয় প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এটি চালু রাখতে গত চার বছরে ব্যয় হয়েছে আরও ১ কোটি টাকা। বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করলেও পৌরসভা এ থেকে সর্বসাকল্যে আয় করেছে মাত্র ১০ লাখ টাকা। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বায়োগ্যাস প্লান্ট। শুধু সীমিত পরিসরে জৈব সার উৎপাদনের মধ্য দিয়ে প্লান্টটির কাজ চলছে।

এমন পরিস্থিতিতে প্লান্টটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দি এসকেট লিমিটেডের কাছে ইজারা দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন) বিএম কামাল আহমেদ জানান, দাতা সংস্থার শর্তানুযায়ী প্লান্টটি তৃতীয় পক্ষকে ইজারা দিয়েই পরিচালনার কথা রয়েছে। সেই অনুযায়ী শুরুতে মাহবুব ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। কিছুদিন পর প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে বাধ্য হয়ে প্লান্টটি স্বল্প পরিসরে চালু রাখে পৌরসভা। বাস্তবে প্লান্টটি চালানোর সক্ষমতা নেই তাদের। গত চার বছরে প্লান্টটি সচল রাখতে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা। বিপরীতে ১৪৫ টন সার উৎপাদন করে আয় হয়েছে মাত্র ১০ লাখ ১৫ হাজার টাকা।

যশোর পৌরসভা থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের শেষদিকে শহরতলির হামিদপুরে ময়লার ভাগাড়ে প্লান্ট নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সি অর্থ সহায়তা দেয়। ২০১৯ সালে এটি চালু হয়। এই প্লান্টে শুধু যশোর পৌরসভা নয়, ঝিকরগাছা পৌরসভাসহ নিকটবর্তী শহরসংলগ্ন এলাকার বর্জ্যও প্রক্রিয়াজাতকরণের পরিকল্পনা ছিল। এ ছাড়া বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন এবং সেপটিক ট্যাঙ্কে পরিবেশবান্ধব জৈব সার তৈরির লক্ষ্য ছিল। উৎপাদিত বায়োগ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করার কথা ছিল আশপাশের এলাকার বাসাবাড়িতে। তবে প্লান্টটি চালুর চার বছরের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। সীমিত জনবল দিয়ে কোনো রকমে চালু রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শহরের ৯টি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ১৩০টি কনটেইনার দেওয়া আছে। এগুলো থেকে প্রতিদিন ৬৫ থেকে ৭০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন সকালে কনটেইনারগুলো ইয়ার্ডে আনার পর কর্মীরা সেখান থেকে বাছাই করে কেবল পচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করেন। তবে বর্তমানে প্লান্টে থাকা ১৫ জন কর্মী দিয়ে ৭-৮ টনের বেশি বর্জ্য বাছাই করা যায় না। এ দিয়েই কম্পোস্ট সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে। এখানে ময়লা বাছাই করতে শতাধিক কর্মী দরকার। এ ছাড়া কম্পোস্ট বিভাগ ও বায়োগ্যাস বিভাগে কোনো কর্মীই নেই।

প্লান্টের ম্যানেজার অমিত কুমার বলেন, বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে প্লান্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণ ময়লা সংগ্রহ করি সেই পরিমাণ সম্পদে পরিণত করতে পারি না। শতাধিক কর্মীর জায়গায় ১৫ জন দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। কম্পোস্ট বিভাগ, বায়োগ্যাস বিভাগে কোনো কর্মী নেই। এখানে উৎপাদিত কম্পোস্ট সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতি মাসে প্রায় ১০০ টন সার এখনই বিক্রি করা সম্ভব। অথচ আমরা মাসে উৎপাদন করছি মাত্র সাত টন।

যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকসিমুল বারী অপু বলেন, প্লান্টটি পরিচালনায় যে পরিমাণ জনবল, গাড়ি ও ময়লা প্রয়োজন, তার কোনোটাই সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছিল না। নীতিমালা অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষকে ইজারার মাধ্যমে এটি চালু রাখতে হবে। সে অনুযায়ী সম্প্রতি দি এসকেট লিমিটেডের কাছে এটি ইজারা দেওয়া হয়েছে।

বিষয় : চার বছরে ব্যয় কোটি টাকা আয় ১০ লাখ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট

মন্তব্য করুন