
নাটোরের ডিসির পুরাতন ডাকবাংলোতে আবাদ করা বিষমুক্ত ফসলের জমি -সমকাল
এক সময় যা ছিল পতিত জমি কিংবা ভবনের ছাদ, সেখানে আজ সবুজের সমারোহ। কোথাও সারিবদ্ধভাবে চাষ করা হয়েছে সবজি; কোথাও নানা জাতের দেশি-বিদেশি ফুল ও ফল। এমনকি ছাদও সেজে উঠেছে বাগানে। সুজলা-সুফলা এসব বাগানের দেখা মিলবে নাটোর জেলা প্রশাসকের পুরাতন ডাকবাংলো ও পুলিশ সুপারের অফিস চত্বর, পুলিশ লাইন চত্বর ও জেলা কালেক্টরেট অফিসের ছাদে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা– ‘এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে জেলার গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থাপনার পরিত্যক্ত জমিতে আবাদ শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসক অফিস সূত্র জানায়, পুরাতন ডাকবাংলোর প্রায় ১৮ বিঘা আবাদযোগ্য জমি এতদিন পরিত্যক্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় অনুপ্রাণিত হয়ে জেলা প্রশাসক সেখানে প্রথম শীতকালীন সবজি চাষসহ বিভিন্ন ফলের গাছ লাগান। এ ছাড়া জেলার কালেক্টরেট অফিসের ছাদেও তৈরি হয় বাগান। প্রায় তিন বিঘা পরিমান এই ছাদবাগানে শীতকালীন সবজি, বারোমাসি ফসলসহ বিভিন্ন রকমের ফুল ও ঔষধি গাছের আবাদ করা হয়। এই ছাদবাগানের তত্ত্বাবধান করছেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাদিম সারোয়ার।
জানা গেছে, এসব বাগানে ৭১ প্রজাতির বিষমুক্ত ফুল, ফল, ঔষধি ও শাকসবজি ফলছে। কালেক্টরেট অফিসের ছাদবাগানের কেয়ারটেকার হাবিবুল ইসলাম জানান, প্রায়ই এখান থেকে কোনো না কোনো সবজি উত্তোলন করে অফিসের কর্মকর্তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়। ডিসি, এডিসিরাও বাগানে এসে গাছগাছালি পরিচর্যা করেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, সমন্বিত উদ্যোগেই পুরাতন ডাকবাংলোর অনাবাদি জমিকে চাষের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। শীতকালীন সবজি আবাদে ভালো ফল পাওয়া গেছে। কালেক্টরেট অফিসের ছাদও চাষের আওতায় এনে বাগান করা হয়েছে। এসব জমিতে উৎপাদিত হচ্ছে বিষমুক্ত সবজি। ব্যবহার করা হচ্ছে জৈব বালাইনাশক। জেলা প্রশাসনের প্রতিটি মিটিংয়ে বাড়ির আঙিনা ও ছাদে সবজিসহ ফল-ফুল আবাদ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়। অন্যান্য সরকারি অফিসকেও তাদের চত্বরের জমিতে সবজি বা ফুল-ফল চাষের জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা পুলিশ সুপারের অফিস চত্বরসহ পুলিশ লাইনের অন্তত তিন বিঘা জমিতে বিভিন্ন শাকসবজি ও ফুল-ফলের আবাদ করা হয়েছে। জেলা গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা এসআই কাজী জালাল উদ্দিন জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাঁরা পুলিশ লাইনের অনাবাদি কিছু জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করেছিলেন। এখন এসব জমিতে শাক-সবজি ছাড়াও নানা জাতের ফলের আবাদ করা হয়।
পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, জেলা পুলিশ অফিস চত্বরসহ পুলিশ লাইন এলাকার ফাঁকা জায়গা পরিকল্পনা অনুযায়ী আবাদের আওতায় আনা গেছে। আগামীতে চাষাবাদ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, জেলার সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর আবাদযোগ্য জমিতে নানা ফল ও সবজির চাষাবাদ শুরু হয়েছে। জেলায় বিভিন্ন অফিস চত্বরে পতিত জমির পরিমাণ ছিল ৬৭২ শতক। এই জমির মধ্যে বর্তমানে চাষ করা হচ্ছে ২৩৫ শতক জমিতে। এর মধ্যে ৮০ শতক জমিতে কুল চাষ করা হয়েছে। আগামীতে আবাদ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন