কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, বাঁধ সংস্কার বন্ধ

কলমাকান্দা উপজেলার আমবাড়ি বাজার সড়ক থেকে হীরাকান্দা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয় ২০১৯ সালে। জাপান উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে বাঁধটি নির্মাণে উদ্যোগ নেয় দশধার রানীগাঁও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। তদারকির দায়িত্বে ছিল এলজিইডি। পরে ওই সমিতির সদস্যদের মধ্যে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

এতে বাঁধটিতে অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দেয় জাইকা। এ কারণে বাঁধের আর সংস্কার হয়নি। গত বন্যার পানিতে চারুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাঠানপাড়া মতিউর রহমানের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার বাঁধে দুটি বড় গর্তসহ কয়েকটি জায়গায় ভেঙে গেছে। বাঁধটি সংস্কার না করা হলে মান্দুরিয়া, পিটুয়া, চাঁটিগাও, বিয়ারবন্দ, ডগড়াবিলসহ কয়েকটি হাওরের ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের।

সরেজমিন দেখা গেছে, পোগলা ইউনিয়নের আমবাড়ি বাজার সড়ক থেকে হীরাকান্দা পর্যন্ত বাঁধটির দুটি অংশে বিশাল গর্ত হয়েছে। একটি পাঠানপাড়া গ্রামের কবির মেম্বারের বাড়ির পাশে, আরেকটি মতিউর রহমানের বাড়ির পাশে। এ ছাড়া বাঁধের বিভিন্ন অংশ গত বন্যায় ভেঙে গেছে। বাঁধটি মেরামত না করলে কলমাকান্দার পোগলা, বারহাট্টার রায়পুর ও বাউসি ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামের বোরো ধান তলিয়ে যেতে পারে।

পাঠানপাড়ার কৃষক বজলুর রহমান জানান, ধারদেনা করে মান্দুরিয়া হাওরে ছয় একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু ভাঙা বাঁধ সংস্কার না করায় ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ফসল ঘরে তুলতে না পারলে পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না বলে দাবি তাঁর।

বাঁধ সংস্কার না করার বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কলমাকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী শুভ্রদেব চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দশধার রানীগাঁও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির কমিটি নিয়ে সদস্যদের মধ্যে কোন্দল চলছে। জাইকাও অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে এখানও বাঁধের সংস্কার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

দশধার রানীগাঁও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা এনামুল হক। বাঁধের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অ্যাডহক কমিটি গঠনের পর থেকেই আমরা সাবেক কমিটির সভাপতি নোয়াব আলী ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল নন্দিকে সমিতির কাগজপত্রসহ দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বারবার তাগিদ দিই। কিন্তু তাঁরা এখনও দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়নি। এ কারণে নতুন কমিটিও গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না।’

তবে শ্যামল নন্দির দাবি, জেলা সমবায় কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র পাল বিধিবহির্ভূতভাবে সমিতি থেকে তাকেসহ ১০ জন সদস্যকে বহিষ্কার করেন। পরে সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে তিন সদস্যের একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করেন। তাই আইনের আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কথা মৌখিক বা লিখিতভাবে জানায়নি।’

জেলা সমবায় কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র পাল বলেন, ‘আমরা চিঠি দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে কমিটি গঠন করেছি। আগের যে কমিটি ছিল, তাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে তারা বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করলে সেখানেও রায় তাদের পক্ষে যায়নি। পরে তারা আদালতে যায়। আমরা তাদের দায়িত্ব হস্তান্তর করার জন্য লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু এখনও দায়িত্ব বুঝিয়ে দেনিন তারা।’     

বাঁধটি খুবই ঝুঁকির মধ্যে আছে। দশধার রানীগাঁও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির কমিটির দ্বন্দ্বের কারণে তা সংস্কার করা যাচ্ছে না বলে জানান পোগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক। তার ভাষ্য, সংসদ সদস্য মানু মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সম্প্রতি বাঁধটি পরিদর্শন করেন। কৃষকরা যাতে নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলতে পারেন, সে জন্য দ্রুত বাঁধটি সংস্কারের আশ্বাস দেন তিনি।

কলমাকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদ বলেন, পোগলার চারুলিয়া ও পাঠানপাড়ার অংশে বেড়িবাঁধ মেরামত করা না হলে কলমাকান্দার প্রায় ২২০ একর জমির বোরো তলিয়ে যেতে পারে। ঝুঁকিতে রয়েছে বারহাট্টা উপজেলার বাউসি ও রায়পুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ বোরো ক্ষেত।