সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে টেকনাফে ফেরার পথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে চারদফা দাবি পেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

হামলার ঘটনা বর্ণনায় অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান নওশাদ বলেন, আমরা সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার জন্য বে-ক্রুজ জাহাজের টিকেট কাটা সত্ত্বেও আমাদের সিটে কালোবাজারি স্টাফরা অন্যদের বসিয়ে দিয়েছে। আমরা সেটা বলতে গেলে আমাদের ওপর তারা চড়াও হয়। এমনকি শিক্ষকরা সমঝোতা করতে গেলে তারা শিক্ষকদের মারধর শুরু করে। দ্বিতীয় দফায় দমদমিয়া ঘাটে আসার পরে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ করে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গুরুতর আহত হন।

মানববন্ধনে অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ফাতেমা আক্তার হিরামনি বলেন, আজকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্লাসে থাকার কথা। কিন্তু জাহাজের স্টাফরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ করে। স্বাধীন দেশে থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বুকে লাথি মারা হয়, এর জন্য রাস্তায় নামতে হয়। এটা লজ্জার। এটাকে সহজভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। তারা প্রতিনিয়ত যাত্রীদের এভাবে হ্যারেসমেন্ট করছে। প্রতিবাদ করতে গেলে মাফিয়াদের সহায়তা নিয়ে আক্রমণ করে। অতিদ্রুত এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সেই জন্য আমি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। 

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা সেন্টমার্টিন থেকে এমভি বে-ক্রুজ জাহাজের সিটিং টিকেট কাটে। টিকেট কাটা সিটে বসা নিয়ে ওরা ঝামেলার সৃষ্টি করে। ঘটনাটা তখনই সমাধান করা যেত। কিন্তু তারা তা না করে পরিকল্পিত ভাবে শিক্ষক-ছাত্রদের ওপর আক্রমণ করে। এর সঙ্গে জাহাজ কর্তৃপক্ষ সরাসরি জড়িত। টুরিস্ট পুলিশের নীরবতাও বলে দেয় তারা তাদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আমার শিক্ষার্থীরা মারধরের শিকার হওয়ায় বিজিবির সহায়তা চেয়েছে। কিন্তু তাদের থেকেও সহায়তা পায়নি আমার শিক্ষার্থীরা।

তাদের দাবিগুলো হলো- ঘটনার সঙ্গে জড়িত জাহাজের স্টাফ-সন্ত্রাসী বাহিনীকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে, বে-ক্রুজ ইন্টারন্যাশনাল জাহাজের লাইসেন্স আজীবনের জন্য বাতিল করতে হবে, বে-ক্রুজ ইন্টারন্যাশনাল জাহাজ কর্তৃপক্ষের মিথ্যা ও বানোয়াট স্টেটমেন্ট প্রত্যাহার পূর্বক লিখিত মুসলেকা দিয়া নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, জাহাজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জান-মালের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এর আগে মঙ্গলবার সেন্টমার্টিন থেকে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতকোত্তর ব্যাচ ট্যুর শেষে বে-ক্রুজ-১ জাহাজে করে টেকনাফ ফিরছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, টেকনাফ থেকে ফেরার সময় পথিমধ্যে আসনে বসাকে কেন্দ্র করে ঝামেলা সৃষ্টি করে বে-ক্রুজ-১ জাহাজের স্টাফরা। প্রথমে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দুই শিক্ষকসহ ১০ জন শিক্ষার্থীর ওপর লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করে জাহাজের স্টাফরা। পরে দমদমিয়া ঘাটে পৌঁছানোর পর আবারও হামলা চালানো হয়। এতে ২জন শিক্ষক ও ১ জন ছাত্রীসহ প্রায় ২০ জনের বেশি আহত হয়। যার মধ্যে ১০ জন গুরুতর আহত হয়।