পরিবার রাজি না হলে কিশোরী প্রেমিকার বাড়ির সামনে গিয়ে ‘খেলা হবে’ স্লোগান দেওয়া এবং প্রয়োজনে তাকে ভাগিয়ে নিয়ে আসার জন্য এক স্কুলছাত্রকে পরামর্শ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। এতে নারায়ণগঞ্জে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। নগরবাসী বলছেন, একজন আইনপ্রণেতা হয়ে শামীম ওসমান আইন লঙ্ঘনের পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর এ পরামর্শে সমাজে যৌন হয়রানি ও কিশোর অপরাধ বাড়বে। 

বুধবার নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর সোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে মঞ্চে তুলে ‘মাইয়া ভাগাইয়া নিয়া আইসা পড়বি’ বলে পরামর্শ দেন শামীম ওসমান। সম্প্রতি এই বক্তাবলীতেই এক বখাটের যন্ত্রণায় এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করে। 

সোবহানিয়া স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান বক্তব্য দেওয়ার শেষ পর্যায়ে দর্শকের সারি থেকে এক স্কুলছাত্র হাত উঁচিয়ে বলে, ‘খেলা হবে স্লোগান : আরেকবার হবে।’ এটি শামীম ওসমানের দৃষ্টি কাড়ে। স্কুলছাত্রকে মঞ্চে ডেকে সে কোন ক্লাসে পড়ে জানতে চাইলে ছেলেটি জানায়, ‘ক্লাস টেন।’

এসময় শামীম ওসমান তাকে বলেন, ‘বান্ধবী টান্ধবী আছে এখানে?’ ছাত্র হ্যাঁ বললে শামীম ওসমান বলেন, ‘ডানে-বামে, নাকি পেছনে আছে?’ ছাত্রও রঙ্গ করে বলে, ‘পুরো মাঠেই আছে।’ শামীম ওসমান বলেন, ‘এটা জিজ্ঞেস করিনি, ওইখানে আছে কি না?’ এর উত্তরে স্কুলছাত্র জানায়, ‘অন্য কোথাও নাই।’ শামীম বলেন, ‘বাইচ্চা গেসোস, নাইলে তোর বাপ আজকে পিঠের চামড়া উঠাইতো।’

এরপর শামীম ওসমান স্কুলছাত্রকে বলেন, ‘যদি একটা পছন্দ কইরাই ফালাস। আর যদি মেয়েও পছন্দ কইরা ফালায়, তারপর শব্শুরবাড়ি যদি বক্তাবলী না হয়, নদীর ওই পারে হয়, আর যদি বক্তাবলীর ছেলের কাছে না দেয় মেয়ে, তাইলে ওই শব্শুরবাড়ির সামনে যাইয়া আমরা কী বলব? খেলা হবে, খেলা হবে। মাইয়া ভাগাইয়া নিয়া আইসা পড়বি।’ 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তার এ বক্তব্য দেখে নারায়ণগঞ্জ গনতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি আওলাদ হোসেন বলেন, ‘ বাবা-মা অনেক আশা ভরসা নিয়ে একটা মেয়েকে বড় করেন। স্বভাবতই তাদের প্রত্যাশা থাকে একজন উপযুক্ত পাত্রের কাছে তার মেয়েকে বিয়ে দিবেন। আধুনিক সময়ে সন্তানরা নিজে পছন্দ করবে সেটাও সমর্থন করি। কিন্তু সেটা নিশ্চয়ই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে। তার আগে মেয়ে বা ছেলে যদি কোনো ভুল করে ফেলে সারাজীবন তাকে ভূগতে হবে। তাই কোনো বাবা-মা-ই চায় না যে স্কুল জীবনে কেউ কারো হাত ধরে চলে যাবে। শামীম ওসমান একজন আইন প্রণেতা হয়েও আইন লঙ্ঘনের পরামর্শ দিয়েছেন। এটা সমাজে অবক্ষয় বাড়াবে। কিশোরদের আইন লঙ্ঘনে উৎসাহিত করবে। কিশোর-কিশোরীদের অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় পড়বে।’ 

কবি আরিফ বুলবুল বলেন, ‘এটা অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত, অরম্নচিকর মন্তব্য।’  নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, শামীম ওসমানেরও মেয়ে আছে। তিনি কিভাবে প্রকাশ্য জনসভায় এ ধরনের একটি মন্Íব্য করলেন বুঝতে পারলাম না। আইন প্রণেতা হয়ে তিনি কীভাবে এমন একটা আইন বিরোধী বক্তব্য দেন। তার এ বক্তব্য অবশ্যই নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের বিপথগামী করবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তার অবস্থানে থেকে এ ধরনের বক্তব্য কিশোর অপরাধ ও ইভটিজিং বৃদ্ধি করবে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।’