- সারাদেশ
- রিসাইকেল প্রক্রিয়ার উৎপাদনে সব পক্ষকে দায়িত্ব নিতে হবে
রিসাইকেল প্রক্রিয়ার উৎপাদনে সব পক্ষকে দায়িত্ব নিতে হবে

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হােটেলে সার্কুলার ইকোনমি সামিটের উদ্বােধন অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হােয়াটলি ও বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানসহ অন্যরা ফটাে রিলিজ
জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে সার্কুলার ইকোনমিতে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। উৎপাদন প্রক্রিয়ার সব পর্যায়ে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে। কমিয়ে আনতে হবে পানি-বিদ্যুতের ব্যবহার। অপচয় রোধে উপজাত বর্জ্যকে মূল্যবান কাঁচামালে পরিণত করতে হবে। এ জন্য উৎপাদন কাঠামোতে রিসাইকেল বা ব্যবহার করা পণ্য দিয়ে পুনরায় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দরকার আরও বেশি মনোযোগ। এ খাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ এবং সহায়ক নীতি কাঠামো দরকার। এ বিষয়ে সরকার, উদ্যোক্তা, ভোক্তা, ব্র্যান্ড, ক্রেতা, উন্নয়ন সহযোগীসহ সব পক্ষকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সার্কুলার ইকোনমি সামিটের বিভিন্ন অধিবেশনে এমন মতামত তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার হোটেল র্যাডিসনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সামিটের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
সামিটে সার্কুলার ইকোনমি সম্পর্কিত পাঁচটি কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ক্রেতা, উন্নয়ন সহযোগী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ৬০ জন প্রতিনিধি এসব অধিবেশেনে বক্তব্য দেন। এ উপলক্ষে ক্রেতা-ব্র্যান্ডসহ ২০টি প্রতিষ্ঠান রিসাইকেল প্রযুক্তিতে উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন করে। বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ (বিইএ) এ সামিটের আয়োজন করে।
উল্লেখ্য, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পদের চক্রাকার ব্যবহারই হচ্ছে সার্কুলার ইকোনমি। এটি এমন একটি অর্থনৈতিক মডেল, যার মাধ্যমে সম্পদের সর্বোত্তম, সাশ্রয়ী ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। এতে বর্জ্য উৎপাদন কম হয়। উৎপাদিত এ বর্জ্য এবং অন্যান্য সেবাকেও পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দুটি বিষয় সাসটেইনেবেলিটিকে গতিশীল করতে পারে। প্রথমত, সরকারি নীতি। দ্বিতীয়ত, ভোক্তা, ক্রেতা, উদ্যোক্তা, উন্নয়ন সহযোগীসহ সব পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টা। টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিতে সরকার প্রস্তুত। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক ঝুঁকি এড়াতে কাজ করতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেন, বাংলাদেশের পোশাকের প্রধান গন্তব্য তাঁর দেশ। এটা তাঁর জন্য সম্মানের। দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে। এ উদ্দেশ্যে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে চান তাঁরা।
বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের প্রসঙ্গে পিটার হাস বলেন, এ বিষয়ে শ্রমিকের ভূমিকা বড়। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এখনও অনেক শ্রমিক তাঁদের যথাযথ অধিকার পাচ্ছেন না। অথচ টেকসই উন্নয়নের শর্ত হচ্ছে সবার অধিকার নিশ্চিত করা। শ্রমিকদের সুরক্ষা পণ্যের ন্যায্য দাম পেতে সাহায্য করবে। তবে শ্রমিক অধিকার পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে, যা প্রশংসনীয়।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, শতভাগ কারখানায় কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পরিবেশ সহায়ক কারখানা নির্মাণে বড় বিনিয়োগ করা হয়েছে। ফলে শিল্প খাতে পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে, যা টেকসই উন্নয়নের পথে সার্কুলার ইকোনমির যাত্রাকে আরও মসৃণ করবে।
পোশাক বর্জ্য আমদানির অনুমতি দিতে পারে সরকার: সামিটের একটি অধিবেশনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, উদ্যোক্তারা চাইলে পোশাক বর্জ্য আমদানির অনুমতি দিতে পারে সরকার। বর্তমানে এ ধরনের বর্জ্য আমদানি নিষিদ্ধ।
বাণিজ্য সচিব বলেন, উদ্যোক্তারা যদি ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে ব্যবহৃত কাপড় এনে রিসাইকেল প্রক্রিয়ায় পুনর্ব্যবহার করতে চান তাহলে সরকার এ-সংক্রান্ত নীতিতে পরিবর্তন এনে সহায়তা দেবে। বর্তমানে ৬ হাজার টন বর্জ্য উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানিতে বিজিএমইএ যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা অর্জনে আরও বর্জ্যের প্রয়োজন হবে।
মন্তব্য করুন