- সারাদেশ
- দুঃখপ্রকাশের পর ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট প্রত্যাহার
অক্সিজেন কারখানার পরিচালকের কোমরে দড়ি
দুঃখপ্রকাশের পর ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট প্রত্যাহার

সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের পরিচালক পারভেজ উদ্দিন ওরফে সান্টু। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের পরিচালক পারভেজ উদ্দিন সান্টুকে কোমরে রশি বেঁধে আদালতে নেওয়ার প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাহাজভাঙা শিল্পমালিকদের সংগঠন সীতাকুণ্ডের সব অক্সিজেন প্লান্ট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
জটিল পরিস্থিতিতে শুক্রবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। বৈঠকে কোমরে রশি বাঁধার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা। সেসঙ্গে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়।
এর আগে পারভেজ উদ্দিনকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রামের সব অক্সিজেন কারখানায় গতকাল শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে জাহাজভাঙা শিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ)।
সেই অনুযায়ী দিনভর কারখানাগুলোতে ধর্মঘট পালন করা হয়। তবে ধর্মঘট স্থগিত করায় আজ শনিবার থেকে অক্সিজেন কারখানাগুলোয় আবার উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে। বৈঠক শেষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, ব্যবসায়ী পারভেজ উদ্দিনের কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের অক্সিজেন প্ল্যান্ট বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। পরে তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সন্ধ্যায় বৈঠক ডাকেন। তাঁরা সাড়া দিয়েছেন। ফলপ্রসূ একটি আলোচনা হয়েছে। তাঁরা ধর্মঘট স্থগিত করেছেন। একজন ব্যবসায়ীর কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত।
একই বিষয়ে শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ঘটনাটি জানার পর তাঁরা তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দায়ী পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ (প্রত্যাহার) করা হয়েছে। যে পুলিশ সদস্য এ ঘটনা করেছেন, সেটা তিনি না বুঝে, অজ্ঞতার কারণে করেছেন। বিষয়টি তাঁরা ব্যবসায়ী নেতাদের জানিয়েছেন। ব্যবসায়ী নেতারাও বুঝেছেন।
বিএসবিআরএ সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম রিংকু বলেন, একজন ব্যবসায়ীকে যেভাবে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নেওয়া হয়েছে, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এর মধ্য দিয়ে পুরো ব্যবসায়ী সমাজকে হেয় করা হয়েছে। তাই তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। শিগগিরই চালু হবে। এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
গত ৪ মার্চ সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির কেশবপুর এলাকায় সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণে সাতজন নিহত ও ২৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় নিহত একজনের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় সীমা অক্সিজেন প্লান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন উদ্দিন, দুই পরিচালকসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ান হাট এলাকা থেকে সীমা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সীমা অক্সিজেন কারখানার পরিচালক পারভেজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে শিল্প পুলিশ। পরদিন তাঁকে কোমরে দড়ি বেঁধে ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আদালতে তোলা হয়। এ ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
মন্তব্য করুন