পদ্মা নদীর এপারে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর খেয়াঘাট। ওপারে পাবনা জেলার সাতবাড়িয়া ঘাট। পাবনায় যাওয়ার জন্য পাংশাসহ এ অঞ্চলের মানুষের সহজ যোগাযোগমাধ্যম এ ঘাট। কিন্তু হাবাসপুর ঘাটে পৌঁছাতেই যাত্রীদের যত ভোগান্তি। হয় দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার পথ ধু-ধু বালুচরে হাঁটতে হবে নয়তো বেশি টাকা খরচ করে ঘোড়ার গাড়িতে যেতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে নদী দূরে সরে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাবাসপুর খেয়াঘাটটি দেড়শ বছরের পুরোনো। উত্তরবঙ্গের পাবনা, রাজশাহী, বগুড়াসহ অন্যান্য জেলার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের রাজবাড়ী, মাগুরা, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর জেলার যোগাযোগের সহজ মাধ্যম এই নৌপথ। এই নৌরুট ব্যবহার করে প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ যাতায়াত করেন। নদীতে নাব্য সংকটের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। বর্ষা মৌসুমে ঘাট মূল রাস্তার কাছাকাছি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে নদী পাঁচ কিলোমিটার দূরে চলে যায়। তখন মানুষকে বালুচর দিয়ে হেঁটে ঘাটে যেতে হয়; নয়তো ৪০-৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে যেতে হয়।

হাবাসপুর খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীতে নাব্য সংকটের কারণে পাড় থেকে খেয়াঘাট সরে গেছে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। পাড় থেকে যত দূর চোখ যায় শুধু ধু-ধু বালু। সেখানেই ১০টি ঘোড়ার গাড়ি অপেক্ষায় রয়েছে যাত্রীদের জন্য। রাজবাড়ীর পাংশা, মাগুরার শ্রীপুর, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, ফরিদপুরের মধুখালী, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ হাবাসপুর খেয়াঘাটে আসছেন। পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া খেয়াঘাটে যাবেন তাঁরা। খেয়াঘাটে পৌঁছানোর জন্য ৪০-৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ছেন যাত্রীরা। আবার কেউ পায়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন। ঘোড়ার গাড়ি চলার সময় চরের বালু ওড়ে। যে কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। স্থানীয়রা বলছেন, রাজবাড়ীর পাংশা আর পাবনা জেলার যোগাযোগের সহজ মাধ্যম হলো এই নৌপথ। তাই মূল ঘাটে যাওয়ার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়া দরকার।

আনোয়ার হোসেন নামে একজন যাত্রী বলেন, এখনও ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এ সময়েও যদি যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাহলে তা খুবই দুঃখজনক।

হাবাসপুর এলাকার বাসিন্দা আহম্মদ আলী, ছাকের আলীসহ কয়েকজন জানান, মাঝে মধ্যেই তাঁদের সাতবাড়িয়া ঘাট দিয়ে পাবনা যেতে হয়। মেয়েছেলেদের নিয়ে যাতায়াতে খুবই কষ্ট হয় তাঁদের। ঘোড়ার গাড়িতে উঠলে ভাড়া গুনতে হয় ৪০-৫০ টাকা। খেয়া পার হতে লাগে আরও ৫০ টাকা। তাঁরা গরিব মানুষ। যাতায়াতে এত টাকা খরচ করার সামর্থ্য নেই। তাই দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার বালুচর হেঁটেই ঘাটে পৌঁছান।

পাবনা জেলার সুজানগর থেকে আসা রবিউল ইসলাম জানান, এখানে একটি সেতু হলে মানুষের দুর্ভোগ আর থাকত না।

ঘোড়ার গাড়িচালক মফিজ মণ্ডল জানান, এই বালুচরে ঘোড়ার গাড়িচালাচ্ছেন তিন বছর ধরে। প্রতিদিন ছয়টি ট্রিপ দিতে পারেন। তাতে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হয়। তবে দীর্ঘ পথ চর পড়ায় আগের মতো যাত্রী আসেন না।

হাবাসপুর ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন খান জানান, যাঁরা পাবনা বা উত্তরবঙ্গ অথবা পাবনা থেকে রাজবাড়ীসহ আশপাশের জেলায় যাতায়াত করেন, তাঁরা যদি কুষ্টিয়ার লালন সেতু হয়ে যান তাহলে তাঁদের ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হবে। এতে টাকা ও সময় দুই-ই বেশি খরচ হয়। যে কারণে শুষ্ক মৌসুমে এই নৌপথে ভোগান্তি নিয়েই পদ্মা পাড়ি দেন তাঁরা। এর একটা সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

পাংশার ইউএনও জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, হাবাসপুর খেয়াঘাটে পৌঁছাতে মানুষের কষ্টের বিষয়টি দেখার পর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিষয় : পদ্মা নদী হাবাসপুর খেয়াঘাট দূরে সরে গেছে নদী

মন্তব্য করুন