ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে অবৈধভাবে গড়ে  উঠছে ভ্রাম্যমাণ এলপিজি ফিলিং স্টেশন। এ স্টেশনে সিলিন্ডার থেকে পাইপ দিয়ে ডিস্পেন্সার মেশিনের মাধ্যমে বাসাবাড়ি ও হোটেল রেস্তোরাঁয় সরবরাহ হচ্ছে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, ফিলিং স্টেশনের গ্যাস খোলা সিলিন্ডারে ভরে রান্নার কাজে ব্যবহার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, যে কোনো সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় চার মাস আগে ‘মায়ের দোয়া ফিলিং অ্যান্ড কনভার্শন সেন্টার’ নামে একটি (এলপিজি) ফিলিং স্টেশন নির্মাণ করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ সড়কের উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের বেনীপাড়া এলাকায়। মেয়াদোত্তীর্ণ বোতলে ভরে এলপিজি গ্যাস বিক্রি করছে তারা।
এ ঘটনায় গত ১৫ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মেঘনা ফ্রেশ এলপিজি গ্যাস কোম্পানির স্থানীয় পরিবেশক মো. খসরু মিয়া।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওই ফিলিং স্টেশন থেকে দিনের বেলায় যানবাহনে গ্যাস দেওয়া হয় না। কিন্তু রাত হতেই তৎপর হয়ে ওঠে গ্যাস বিক্রি। মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন খোলা সিলিন্ডারে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গ্যাস ভরে তা বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাঁয় বিক্রি হচ্ছে। ১২ কেজি ধারণ ক্ষমতার সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে তিন থেকে পাঁচ কেজি। এতে ঠকানো হচ্ছে জনগণকে আর সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও করছেন স্থানীয়রা।

গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মায়ের দোয়া ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ১০-১৫ জন স্থানীয় বাসিন্দা খোলা সিলিন্ডার নিয়ে অপেক্ষায় আছেন গ্যাস ভর্তি করার জন্য। রাত বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে গ্রাহকের সংখ্যাও। এ সময় কথা হয় গ্রাহক আব্বাস মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি এই ফিলিং স্টেশনে বাজার থেকে কম মূল্যে গ্যাস বিক্রি করা হয় এবং আমাদের বলা হয়েছে, রাত ১২টার পরে আসার জন্য।’

যমুনা গ্যাস লিমিটেড কোম্পানির নাসিরনগর সেলস কর্মকর্তা ইলিয়াস ফকির বলেন, নাসিরনগরে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভ্রাম্যমাণ ফিলিং স্টেশন করে অবৈধভাবে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

বিস্ফোরক আইনে বলা আছে ‘স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ কাজে নিয়োজিত এলপিজি বিতরণ স্টেশন থেকে মোটরযানে বা অন্য কোনো স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিনে সঙ্গে সংযুক্ত জ্বালানি ধারণ পাত্র ব্যতীত অন্য কোনো বহনযোগ্য পাত্রে এলপিজি ভর্তি করা যাবে না।’

উপজেলার সদর ইউনিয়নের ওমেরা গ্যাস কোম্পানির ডিলার খসরু মিয়া বলেন, আমরা বাসায় যে গ্যাসের বোতলগুলো ব্যবহার করি, সেগুলোতে তরল গ্যাস ভরা হয়। কিন্তু ফিলিং স্টেশনে প্রেশারের মাধ্যমে হাওয়া জাতীয় গ্যাস ভরা হয়। এতে যে কোনো সময় বিস্ফোরণ হতে পারে।

জানতে চাইলে মায়ের দোয়া ফিলিং অ্যান্ড কনভার্শন সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মো. কুদ্দুস মিয়া অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কয়েকদিন আগে বাসাবাড়ির সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা হয়েছিল। পরে কর্মচারীদের মানা করে দিয়েছেন। তবে ফিলিংস স্টেশন করতে কৃষি অফিস, ফায়ার স্টেশন, ভূমি অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যায়ন নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, কৃষি অফিস থেকে প্রত্যয়নের জন্য আবেদন করেনি কেউ।

নাসিরনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার হিমাংশু রঞ্জন সিংহ বলেন, শুনেছেন এখানে অবৈধভাবে যানবাহনের গ্যাস রান্নার সিলিন্ডারে ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে গ্যাস সরবরাহে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। নাসিরনগরে অবৈধভাবে গ্যাস রিফিল করার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।