পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নে ২৫ বছর ধরে চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা কাজী হেমায়েত উদ্দিন হিরণ। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে তিনি ৯৭৭ ভোটে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন। এদিন উপজেলার পাঁচটির মধ্যে তিন ইউপিতেই হেরেছে নৌকা। দুটিতে হাতপাখা ও একটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। পার্শ্ববর্তী বরগুনার তালতলী উপজেলার শারিকখালী ইউপিতেও নৌকার বিপরীতে জয় পেয়েছে হাতপাখা। ছয় মাস আগে কলাপাড়ার ধুলাসার ও মহিপুর ইউপি নির্বাচনেও নৌকার প্রার্থীরা হেরে যান যথাক্রমে হাতপাখা ও বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। এর আগে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভায় লাঙ্গলের কাছে পরাজিত হয় নৌকা। আওয়ামী লীগের দুর্গখ্যাত এ অঞ্চলে নৌকার ধারাবাহিক পতনে খোদ দলটির নেতারাও বিস্মিত।

স্থানীয় নেতারা জানান, কলাপাড়া ও তালতলীতে স্বাধীনতার পর জাতীয় নির্বাচনে কখনও আওয়ামী লীগ হারেনি। ২০০৯ সালের পর কলাপাড়ায় পায়রা সমুদ্রবন্দর ও পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার পরিচিতি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। রাজধানী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত হয়েছে সড়ক যোগাযোগ। তালতলীর পায়রা তীরে নির্মাণাধীন আরেকটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘিরে উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে বরগুনা। এত উন্নয়নের পরও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের প্রধান কারণ হিসেবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দায়ী করেছেন তৃণমূল নেতারা।

পটুয়াখলী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের বর্তমান এমপি মহিবুর রহমান তালুকদার এবং সাবেক এমপি ও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান তালুকদারের বিরোধ এখন প্রকাশ্যে। আপন মামাতো-ফুফাতো এই দুই ভাই দ্বাদশ নির্বাচনের মনোনয়ন ঘিরে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া। তাঁদের বিরোধ ছড়িয়েছে ওয়ার্ডেও। দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় অনেক নেতার বিরুদ্ধে জুলুম-নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। স্বার্থের দ্বন্দ্বও প্রকট। এসব কারণে মানুষ বিকল্প হিসেবে চরমোনাই পীরের দল ও অন্যদের বেছে নিচ্ছেন।

নৌকার পরাজিত প্রার্থী কলাপাড়ার ডাবলুগঞ্জ ইউপির মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা বর্তমান ও সাবেক এমপির বিরোধের বলি। পদধারী অনেক নেতা হাতপাখার প্রার্থীর সঙ্গে আঁতাত করেন। এ জন্য মাত্র ২৪৯ ভোটে হেরে গেছি।’ মিঠাগঞ্জ ইউপির পরাজিত প্রার্থী কাজী হেমায়েত উদ্দিন হিরণ বলেন, ‘আওয়ামী লীগই আমাকে হারিয়ে দিয়েছে। দলে নেতার চেয়ে বেইমান বেশি।’

জানতে চাইলে সাবেক এমপি মাহবুবুর রহমান তালুকদার উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন না হলে জনগণ ভোট কেন দেবে?
এমপি উন্নয়ন বরাদ্দ পান ২০ কোটি টাকা।

টিআর-কাবিখার কাজ কতটুকু হলো? মুজিববর্ষে গৃহহীনদের ঘর কেন বেচাকেনা হয়?– এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই পরাজয়ের কারণ মিলবে।’

বর্তমান এমপি মহিবুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইউপি ও কুয়াকাটা পৌর নির্বাচনে নৌকা হেরেছে।’

কলাপাড়া উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের সেক্রেটারি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারে পাঁচ ইউপিতেই ক্ষমতাসীনরা হামলা-মামলা না করলে হাতপাখার ফল আরও ভালো হতো।’ তালতলীর শারিকখালী ইউপিতে টানা ১৫ বছরের চেয়ারম্যান আবুল বাশার বাদশা তালুকদার বৃহস্পতিবার তৃতীয় হন। তিনি দাবি করেন, দলের বড় একটি অংশ বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়ে নৌকার পরাজয় নিশ্চিত করেছে। এখানে বিজয়ী হাতপাখার প্রার্থী ফারুক খান বলেন, ‘বর্তমান চেয়ারম্যান জনবিচ্ছিন্ন। এজন্য মানুষ হাতপাখা বেছে নিয়েছেন।’