- সারাদেশ
- কষ্টের সূর্যমুখী নষ্ট করে ছবি
কষ্টের সূর্যমুখী নষ্ট করে ছবি

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে একটি সূর্যমুখীর ক্ষেত মুগ্ধ হয়ে দেখছে শিক্ষার্থীরা‘ - সাজ্জাদ নয়ন
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে বেড়েছে সূর্যমুখীর চাষ। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে চাষের পরিসর। ফুলে ফুলে ভরে গেছে ক্ষেত। তবে সূর্যমুখী ফুল দেখতে এখন উপচেপড়া ভিড় মানুষের। এভাবে পর্যটকের উৎপাতে উদ্বেগও বাড়ছে। এর পরও ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষক। অনেকে শখের বশে সূর্যমুখীর চাষ করলেও এখন লাভের আশা করছেন।
স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, সিরাজদীখানে সব ধরনের ফসল উৎপাদন হলেও প্রধান অর্থকরী ফসল আলু। অনেক চাষি জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছর আলুতে লোকসান গুনতে হয়েছে তাঁদের। এ কারণে সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন অনেকে। অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখী তেল শরীরের দুর্বলতা দূর করে শক্তি বৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকা রাখে। যে কোনো তেলের চেয়ে এটি অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ। সে কারণে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সূর্যমুখীর চাষ।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সিরাজদীখানে চার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছিল। এ বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত হেক্টরে।
তবে সূর্যমুখীর চাষ করে বিপাকে পড়েছেন অনেক কৃষক। দৃষ্টিনন্দন ফুলের মধ্যে কেউ সেলফি, কেউবা স্বজন নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছবি তুলতে ভিড় করছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে ছুটে যাচ্ছেন অনেকে। গত এক সপ্তাহে সূর্যমুখী ফুলের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে
ভিড় বাড়ছে মানুষের। দূর থেকে মানুষ ছুটে আসছেন ক্ষেতে।
ঢাকা থেকে সপরিবারে আসা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ফেসবুকে ফুলের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে ছবি তুলতে এসেছি। কারণ ঢাকায় এমন পরিবেশ কোথাও নেই।’ বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছবি তুলতে আসা সাদেকুর রহমান জানান, মাঠজুড়ে এমন সূর্যমুখী ফুল কখনও দেখেননি। স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তুলতে এসেছেন তাঁরা।
স্থানীয় চিত্রকোট ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হুদা বাবুল সাড়ে চার বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। আগের বছরের মতো এবারও তিনি বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য চাষ করেছেন সূর্যমুখী।
চেয়ারম্যান জানান, মাঠজুড়ে ফুলে ভরে যাওয়ায় দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন সব শ্রেণির মানুষ ছবি তোলার জন্য ভিড় করছেন। মানুষের উপস্থিতি ভালো লাগছে। কিন্তু কিছু মানুষ গাছ দুমড়ে-মুচড়ে ভেতরে গিয়ে ছবি তুলছেন, যা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে গত বছরের মতো এবারও ভালো ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ শুভ্র জানান, সারাবিশ্বে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু হয়েছে। সে লক্ষ্যে কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কৃষককে সার ও বীজ বিতরণের করা হয়েছে। এবার সিরাজদীখানে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে সাত হেক্টর জমিতে।
এ কর্মকর্তা বলেন, সূর্যমুখী চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন কৃষক। যদি কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তাহলে দ্বিগুণ লাভ করতে পারবেন তাঁরা। ফলে একদিকে কৃষক উপকৃত হবেন, অন্যদিকে মিটবে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা।
মন্তব্য করুন