ভারতের পশ্চিমবঙ্গে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার ভোরে রাজ্যের দুর্গাপুরের কুড়ুলিয়াডাঙার মিলনপল্লি এলাকা থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।

মারা যাওয়া চারজন হলেন- একই এলাকার অমিত মণ্ডল, তার স্ত্রী রূপা মণ্ডল এবং তাদের দুই সন্তান নিমিত মণ্ডল (৭) ও ১০ মাস বয়সী নিকিতা মণ্ডল। তাদের মধ্যে অমিত মণ্ডলের মরদেহ তার নিজের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায়, আর স্ত্রী রূপা এবং দুই সন্তানের ঘরের মধ্যেই পড়েছিল। অমিতের স্ত্রী রূপা পেশায় সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন।

জানা যায়, মৃত্যুর আগে এক স্বজনকে পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ নিয়ে আত্মীয়স্বজনকে দায়ী করেছিলেন অমিত। পাশাপাশি পরিবারের অবৈধ সম্পদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া নিয়েও কথা বার্তা দিয়েছিলেন তিনি।

অমিত ও রূপা মণ্ডলের স্বজনদের অভিযোগ, তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাদের দাবি, অমিতের সঙ্গে তার পরিবারের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ ছিল। এছাড়া তিনি পরিবারের কয়েকজনের চাকরির প্রকৃত রহস্য জেনে ফেলার কারণেই সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে অমিত মণ্ডলকে।

অমিতের মাসতুতো বোন সুদীপ্তা ঘোষের অভিযোগ, এই ঘটনার পিছনে অমিত ওরফে বুবাইয়ের মা বুলারানী মণ্ডল ও মামাতো ভাই সুশান্ত নায়েক ওরফে নান্টু জড়িত রয়েছেন। সুদীপ্তা বলেন,  দাদা জানতে পেরে যায় মামার বাড়ির পরিবারের বেশ কয়েকজন ২০১২ সালে পরীক্ষায় পাস না করেও চাকরি পেয়েছিল। এমন কথা দাদা আমাকে হোয়াটস অ্যাপে লিখে জানান। ওই মেসেজে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়সহ সিবিআই ও পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন দাদা। তারপর ভোরেই এ ঘটনা ঘটল।

সুদীপ্তা জানান, অমিতের হাত গামছা দিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধা ছিল। বাড়ির সিসিটিভি কালো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। রাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল রাস্তার আলো। শনিবার রাতে অমিতের মা বুলারানী মণ্ডল ওই বাড়িতেই ছিলেন।

সুদীপ্তার প্রশ্ন, হাত বাঁধা থাকলে তার দাদা কীভাবে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন?

এদিকে একসঙ্গে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাবাসী ওই বাড়ির সামনে ভিড় করেন। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করতে এলে এলাকাবাসী মৃতদেহ উদ্ধার করতে পুলিশকে বাধা দেয়। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে স্থানীয়রা মৃতদেহগুলো পুলিশকে নিতে দেবেন না বলে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনাকে ঘিরে গোটা এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যরা পৌঁছে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অমিতের মাসহ দুইজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চাকরির নিয়োগ কেলেঙ্কারি কাণ্ডে এই প্রথম খুনের অভিযোগ উঠল। এর আগে ভারতের উত্তরপ্রদেশে মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রবেশিকা পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ব্যাপম কেলেঙ্কারি নামে সেই দুর্নীতি কাণ্ডে মামলায় অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজন অন্তত ২৬ জনের ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’হয়। কারও মতে, মৃতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসেবের দ্বিগুণ থেকে ছয় গুণের বেশি। মৃতের তালিকায় ছিলেন মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল, প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা, রামনরেশ যাদবের ছেলে শৈলেশ যাদবের নামও। গ্রেপ্তার করা হয়েছিল প্রায় ২০০০জনকে।  ওই মামলায় নাম জড়িয়েছিল মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী, বিজেপি-র সর্বভারতীয় মুখপাত্র সুধাংশু মিত্তল, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দুই অতি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা সুরেশ সোনি ও প্রভাত ঝা। এ ছাড়াও নাম জড়িয়েছে রাজ্যের বেশ কিছু মন্ত্রী ও সাংসদের।