মানিকগঞ্জের সিংগাইরে জমি ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধে খন্দকার সাইফুল ইসলাম কমল হত্যা মামলায় একজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকী ৫ জন আসামির বিরুদ্ধে এই মামলায় সংশ্লিষ্টতা না থাকায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

রোববার দুপুরে আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সাবিনা ইয়াসমিন। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তের নাম শিমুল আহমেদ। তিনি ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার ইশাননগর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মথুরনাথ সরকার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার নথির বরাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, খন্দকার সাইফুল ইসলাম কমল পার্শ্ববর্তী তালেবপুর গ্রামের ফয়েজ আহম্মেদের সাথে জমির ব্যবসা করতেন। সেই সুবাদে ফয়েজের ভাগিনা শিমুল আহমেদের সাথেও কমলের ঘনিষ্ঠতা হয়। ২০১৪ সালের ১৬ এপ্রিল দুপুর ২ টার দিকে কমলের বাড়ি আসেন শিমুল। পরে তারা দুজন মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। বিকাল ৫ টা পর ফয়েজ ফোন করে জানান কমল ধামরাই এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। পরে একই দিন সন্ধ্যা ৭ টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে কমলের লাশ বাড়িতে আনা হয়। সে দিন রাত ১২টার দিকে কমলের লাশ দাফন করা হয়।  পরের দিন কমলের পরিবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারে শিমুল ও তার মোটরসাইকেলটিও সম্পূর্ন অক্ষত আছে। কোথায় কিভাবে কমল দুর্ঘটনা কবলিত হয় তার সঠিক তথ্য দিতে পারে না শিমুল। এমনকি ধামরাই থানায়ও দূর্ঘটনা সম্পর্কে কোন অভিযোগ বা সংবাদ পায়নি পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে কমলের পরিবার লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য আবেদন করে। পাশাপাশি কমলের বাবা খন্দকার মো. রেজাউল ইসলাম সিঙ্গাইর থানায় ছয়জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিলাল হোসেনের উপস্থিতিতে লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরও জানান, এ ঘটনায় ২০১৪ সালের ১০ জুলাই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন সিংগাইর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক মো. মিরান হোসেন মৃধা। ওই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বিবাদী পক্ষ নারাজি দিলে পরবর্তীতে সিআইডি এই মামলার পুন:তদন্ত করে। ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিআইডির তৎকালীন উপ-পরিদর্শক কাজী আবদুল আওয়াল ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরা হলেন শিমুল আহেমদ, রিমন মিয়া, ফয়েজ আহমেদ, সুজন মিয়া, ওমর ফারুক ও আব্দুস সালাম।  ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় বিচারক রায় ঘোষণা করেন।  

এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী  একেএম কায়ছার , ফরহাদ খান ও দেলোয়ার হোসেন উচ্চ আদালতে আপিলের কথা বলেন।