- সারাদেশ
- প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে বদলে গেল বলরামের জীবন
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে বদলে গেল বলরামের জীবন

বলরাম কর্মকার
স্ত্রী ও সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন বলরাম কর্মকার। ভিটেমাটি হারিয়ে একসময় ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এরকম পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে বদলে গেছে তার পুরো জীবন। এখন প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘরের সঙ্গে পাওয়া দুই শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন কামারশালা। সেই সঙ্গে পালন করছেন হাঁস, মুরগি ও ছাগল। ঘরের আঙ্গিনায় আবাদ করছেন নানা ধরনের সবজি। সবমিলে বলরাম এখন আত্মনির্ভরশীল।
বলরাম কর্মকার গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের ঊনশিয়া গ্রামের মনোরঞ্জন কর্মকারের ছেলে।
বলরাম কর্মকার বলেন, আমার বাবা মনোরঞ্জন কর্মকার ঊনশিয়া গ্রামের একজন বিখ্যাত কর্মকার ছিলেন। আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই ভাল ছিল। বাবার মৃত্যুর পর আমি সংসারের হাল ধরি। আমার দোতলা টিনের ঘর ও ২ বিঘা মাঠের জমি ছিল। স্ত্রী ও ছেলে অসুস্থ হলে ঋণ করে তাদের চিকিৎসা করাই। কিন্তু স্ত্রী মারা যায়। তবে ছেলে সুস্থ হয়। ঋণের দায়ে জমি, বাড়ি বিক্রি করে দেই। ভূমিহীন হয়ে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতে থাকি। ভিটেমাটি হারিয়ে আমি হতাশ হয়ে পড়ি। তাই ভারত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের একটি ঘর পাই। এই ঘরে বসবাস করছি। ঘরের পাশে কামারশালা করে লোহার কাজ করছি। পঙ্গু ছেলেকে নিয়ে কাজ করে এখান থেকে সংসার চালানোর টাকা উপার্জিত হচ্ছে। এই আয় দিয়ে ৫ জনের সংসার ভালভাবে চলছে।
তিনি আরও বলেন, ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করছি। সেইসঙ্গে আশ্রয়ণের আঙ্গিনায় লাউ, বেগুন, ডাটাসহ সবজির চাষ করছি। আশ্রয়ণে ঘর পেয়ে আমার জীবন এখন সমৃদ্ধ। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাকে তিনি নতুন করে বাঁচার অবলম্বন করে দিয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর জন্য আমি পূজার সময় প্রার্থনা করি। ভগবান যেন তাকে দীর্ঘ জীবন দান করেন।
বলরাম কর্মকারের প্রতিবেশী এনায়েত বিশ্বাস ও উজ্জ্বল ফারজী বলেন, বলরাম কর্মকার শেষ জীবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে ঘুরে দাড়িয়েছেন। একটি ঘর তার জীবনের গল্পকে বদলে দিয়েছে। তিনি হতাশা কাটিয়ে পৈতৃক পেশা আকড়ে ধরে সমৃদ্ধ জীবন পেয়েছেন। তিনি হতাশাগ্রস্ত ও বৃদ্ধদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
এদিকে আগামী ২২মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটালীপাড়া উপজেলার ১২৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে ঘরের চাবি ও দলিল হস্তান্তর করবেন। এই ১২৯টি পরিবারের মধ্যে ঘর পাচ্ছেন কয়খা গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা সালেহা বেগম। তিনি বলেন, এতোদিন আমার ঘর ও জায়গা কিছুই ছিল না। অন্যের জায়গায় একটি ঝুঁপড়ি ঘর তৈরি করে থাকতাম। আগামী বুধবার আমাগো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে একটি পাকা ঘর ও ২ শতাংশ জমি দিবেন। আমি খুবই আনন্দিত। আমার আর এখন অন্যের জায়গায় থাকতে হবে না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের উপজেলায় সরকারিভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের অনেক ঘর দিয়েছেন। আগামী ২২ মার্চ আরো ১২৯টি পরিবারের মাঝে ঘর বিতরণ করবেন। এছাড়াও মুজিববর্ষ উপলক্ষে জননেত্রী শেখ হাসিনা দলীয়ভাবে ২০০টি ঘর দিয়েছিলেন। সে ঘরগুলো আমরা সঠিকভাবে ২০০টি গৃহহীন পরিবারের মাঝে বিতরণ করেছি।
উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে আমরা কোটালীপাড়া উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন করতে পেরেছি। এ জন্য আমরা কোটালীপাড়াবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরেদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘ক’ শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রতিটি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ১টি সেমি পাঁকা ঘর ও ২ শতাংশ জমি দিয়েছেন। ঘর বিতরণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী, অসহায়, স্বামী পরিত্যাক্তা, বিধবাসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি। তারপর ভূমিহীন ও গৃহহীন তালিকাভুক্ত সব পরিবারকেই আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দিয়েছি। ঘর পেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এসব মানুষ সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন। আমরা তাদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। তাই তারা উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উন্নয়ন প্রতিনিধি ও অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, দেশে কোন মানুষই ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না বলে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে আমরা কোটালীপাড়া উপজেলায় ২৩৫টি ঘর বিতরণ করেছি।
মন্তব্য করুন