১৭৮৭ সালের ১ মে স্থাপিত হয় ময়মনসিংহ জেলা। এখন এর বয়স ২৩২ বছর। প্রায় দুই কোটি লোকের বাস ময়মনসিংহে। এককালে আয়তনে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম জেলা হিসেবে পরিচিত ছিল। এটি প্রাচীনকাল থেকেই কৃষিপ্রধান অঞ্চল হিসেবে খ্যাত। মৈমনসিংহ গীতিকা ১৭-১৮টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা বিশ্বখ্যাত। এ জেলা রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও সামাজিকভাবে অনেক অগ্রসর। ফকির বিদ্রোহ, টংক আন্দোলন; তারও আগে নীলকর বিদ্রোহ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, স্বদেশি আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছেন এ অঞ্চলের সন্তানরা। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম, পরবর্তী সময়ে ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এ জেলার সন্তানরা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছেন– তাঁরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না।

সত্তর দশক থেকে আজ পর্যন্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহকে ৬টি জেলায় ভাগ করা হয়েছে। শিক্ষা, কৃষি, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে এগিয়ে থাকা ময়মনসিংহ জেলায় অনেক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছেন। এ তালিকায় কমরেড মণি সিংহ, কর্নেল আবু তাহের, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রমুখ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়াও রয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জাদুকর পিসি সরকার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, কবি সুকুমার রায়,চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় প্রমুখ ব্যক্তিত্ব। ১৯০৫ সালে ব্রিটিশরা ময়মনসিংহকে বিভাগে উন্নীত করার চিন্তা-ভাবনা করেছিল। এরও অনেক পরে খুলনাকে বিভাগে উন্নীত করা হলেও ময়মনসিংহের ব্যাপারে আর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। এর পর ১৯৯৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে বিচারপতি আব্দুর রউফ বিভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সুপারিশ করেন। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহ ও উদ্যোগে বিভাগ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে ময়মনসিংহ। তবে ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণার চার বছর হতে চললেও এর সার্বিক ও সমন্বিত উন্নয়নের ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। বিষয়টি নিঃসন্দেহে হতাশাজনক।

সাবেক ছাত্রনেতা ও নির্বাহী সম্পাদক, পাক্ষিক অন্যচিত্র