বিমানের ফাস্ট অফিসার সাদিয়া ইসলামের পাইলট সনদ বাতিল হচ্ছে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এরই মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে প্রাথমিকভাবে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 

কর্মকর্তারা জানান, ফ্লাইং একাডেমির সনদ অনুযায়ী বেবিচক থেকে সাদিয়াকে পাইলটের সনদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মানবিক বিভাগে পড়াশোনা ও জাল সার্টিফিকেট বিষয়ে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তার পাইলট সনদ বাতিল করা হচ্ছে। এমনকি পাইলটদের শিক্ষা সনদ যাচাইয়ে মঙ্গলবার বেবিচক থেকে সব এয়ারলাইন্সকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।  

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান সমকালকে জানান, ফ্লাইং ক্লাবের প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ সার্টিফিকেট অনুযায়ী সাদিয়া ইসলামকে পাইলট সনদ দেওয়া হয়েছিল। এখন তার বিরুদ্ধে স্কুল ও কলেজের শিক্ষা সনদ জাল করাসহ নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ কারণে তার পাইলট সার্টিফিকেট (সনদ) বাতিল করা হচ্ছে । এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। 

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সব কর্মকাণ্ড থেকে প্রাথমিকভাবে সাদিয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি ও প্রধান সিইও মো. শফিউল আজিম এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি সমকালকে বলেন, পাইলট সাদিয়া এখন বিমানের কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। 

সূত্র জানায়, মানবিক বিভাগে পড়াশোনা করেছেন বিমানের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এয়ারক্রাফটের ‘পাইলট’ সাদিয়া ইসলাম। কিন্তু পদার্থ বিজ্ঞান, গণিতের মতো বিষয়ে পড়াশোনা না করে তিনি কীভাবে পাইলট হলেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। সাদিয়ার নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। তবে পাইলট সাদিয়ার নিয়োগ নিয়ে বেবিচক ও বিমানের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে কর্মকর্তারা জানান, সাদিয়ার দেওয়া বিভিন্ন সার্টিফিকেট অনুযায়ী বিমানে প্রশিক্ষক হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানেও তিনি উত্তীর্ণ হতে পারেননি। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক কর্মকর্তা জানান, বেবিচকের লাইসেন্স শাখার অসাধু এক শ্রেণির কর্মকর্তার যোগসাজশে তদন্ত ছাড়াই পাইলট সার্টিফিকেট (সনদ) দেওয়া হচ্ছে। এতে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ওই চক্রটির বিরুদ্ধে। 

সব পাইলটের শিক্ষাসনদ যাচাইয়ে বেবিচক চিঠি

এদিকে দেশের সব এয়ারলাইন্স, হেলিকপ্টার অপারেটর এবং ফ্লাইং একাডেমিকে পাইলটদের একাডেমিক সার্টিফিকেট যাচাইয়ের জন্য চিঠি দিয়েছে বেবিচক। মঙ্গলবার এ চিঠি দেওয়া হয়। বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশনস বিভাগের সদস্য এয়ার কমোডর শাহ কাওসার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার এবং এয়ার অ্যাস্ট্রাসহ ২২টি অপারেটরকে আগামী ৩১ মের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। 

বিমানের ফাস্ট অফিসার সাদিয়া আহমেদ উচ্চমাধ্যমিকে মানবিক বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি নিজেকে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী উল্লেখ করে জাল শিক্ষাসনদ জমা দিয়েছিলেন। বেবিচকের নির্দেশিকায় বলা আছে যে, বাণিজ্যিক পাইলটদের অবশ্যই এইচএসসি (বিজ্ঞান) বা বাধ্যতামূলক পদার্থবিদ্যা ও গণিতের পাশাপাশি সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে।