- সারাদেশ
- সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন
সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন

প্রতীকী ছবি
রাজধানীর বনানী ক্লাবে নিজ এলাকার নেতাকর্মীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মমিন আলী। রোববার রাতে সেখানে উপস্থিত হন ৫৫ নেতাকর্মী। নৈশভোজের আয়োজন করা হয় ক্লাবটিতে। তাঁদের ভাষ্য, প্রকাশ্যে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। এই আলোচনাকে ‘গোপন বৈঠক’ আখ্যা দিয়ে নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। নেওয়া হয়েছে রিমান্ডেও। এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। দলের নেতাকর্মীরা কোথাও বসে কোনো বিষয়ে আলোচনা করতেই পারেন। তা ছাড়া বনানী ক্লাবে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা।
মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন বলেন, ধরে নেওয়া যাক বিএনপি সেখানে সভা-সমাবেশ করছিল। রাজনৈতিক দল হিসেবে সেই অধিকার তাদের আছে। বনানী ক্লাবে যে সামাজিক অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন, সে জন্য সেখানে আগে থেকে খাবার অর্ডার করা ছিল। এই অনুষ্ঠান হঠাৎ করে হয়নি। কোনোকিছু তোয়াক্কা না করে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে বলছে, গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন তাঁরা।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, পুলিশ একা কাজ করে না। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রিপোর্ট দেয়। এসব রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ ওই ধরনের অভিযানে যায়। কত স্থানে কত অনুষ্ঠানই তো হয়, সব জায়গায় তো পুলিশ যায় না। নিশ্চয় কোনো তথ্য ছিল। দাওয়াতের পেছনে কোনো বিশেষ পরিকল্পনা ছিল কিনা, তা পুলিশের তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।
রোববার রাতে ৫৫ জনকে গ্রেপ্তারের পর ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ৫৩ জনসহ অজ্ঞাত ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বনানী থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলায় বলা হয়েছে, আসামিরা রাষ্ট্রবিরোধী আলোচনা করছিলেন। সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন তাঁরা। ৫৩ জনকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে সোমবার আদালতে হাজির করা হয়। অসুস্থ থাকায় একজনকে জামিন দেন আদালত। ৫২ জনকে দু’দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁরা এলোমেলো তথ্য দিচ্ছেন। সামাজিক অনুষ্ঠানের কথা বলা হলেও পেছনে তাঁদের ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান কিংবা দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে একত্র হলেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। রাষ্ট্রবিরোধী গোপন বৈঠকের কথা বলে মামলা দেওয়া হচ্ছে, রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীর মতো আচরণ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁদের।
এর আগেও গত বছরের ১২ নভেম্বর মহাখালীতে এসকেএস টাওয়ার ফুড কোর্টে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে বনানী ও কাফরুল থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হলে পুলিশ তাঁদের ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করে। তখনও বলা হয়েছিল, তাঁরা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে গোপন বৈঠক করছিলেন।
রোববার রাতে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন– মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মমিন আলী, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস ধীরেন ও শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম।
দলটির নেতারা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মমিন আলী মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। হজে যাওয়ার আগে স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাওয়াত দিয়েছিলেন তিনি। এটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। তিনি বনানী ক্লাবের একজন সদস্য। ক্লাব কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই তিনি তাঁদের নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান। সেখানে কোনো কর্মসূচি ছিল না।
মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন বলেন, থানা বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী কীভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারে। এটা হাস্যকর।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না সমকালকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে তল্লাশি করতে হয়, নাগরিক অধিকার রক্ষা করতে হয়, তা জানে না। এ ধরনের গ্রেপ্তারে সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। ৫৪ ধারা বাতিল হলে এ ধরনের গ্রেপ্তার এবং অজ্ঞাত আসামি করে মামলা কমে যাবে।
মন্তব্য করুন