সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির দক্ষিণ সোনাইছড়ি ত্রিপুরাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয়ে মাত্র দু’জন শিক্ষক থাকলেও বেতন বন্ধ থাকায় তাঁরা পদত্যাগ করেছেন। ফলে অবহেলিত আদিবাসী শিশুদের জন্য চালু হওয়া বিদ্যালয়টি স্থায়ীভাবে বন্ধের আশঙ্কা করা হচ্ছে।


প্রতিদিন বিদ্যালয়ে এসে স্কুলের দরজায় তালা ঝুলানো দেখে শিশুরা আবার দুর্গম পাহাড়ে তাদের ঘরে ফিরে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ত্রিপুরাপাড়ার শিশুরা।


বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বছর ধরে বেতন না পাওয়ায় তাঁরা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। চলতি মাসের (মার্চ) প্রথমে দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তাঁরা।  এদিকে পদত্যাগকারী শিক্ষকরা ফিরে না এলে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চালু রাখার আশ্বাস দিয়েছেন ইউএনও।


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের পূর্বদিকের দুর্গম পাহাড়ে দুটি ত্রিপুরাপাড়া আছে। এই দুই পাড়ায় ৬৫টি ত্রিপুরা আদিবাসী পরিবারের বসবাস। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে একটি প্রজেক্টের আওতায়  ত্রিপুরাপাড়ায় প্রথম প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু হয়।


সোনাইছড়ি ত্রিপুরাপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সমতল ভূমিতে তিন কক্ষের একটি বিদ্যালয় ঘর। ঘরটি সেমিপাকা। ত্রিপুরাপাড়ার ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী অনেক শিশুই পড়তে এসেছে এ বিদ্যালয়ে।

ত্রিপুরাপাড়ার বাসিন্দা কাঞ্চন ত্রিপুরা জানান, পাঁচ বছর আগে স্কুল পেয়ে ওই এলাকার মানুষ ভীষণ খুশি হন। ফলে শিশু শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষকরা সপ্তাহে দুই-তিন দিনের বেশি স্কুলে আসতেন না। অভিভাবকরা এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলে উল্টো রেগে যেতেন তাঁরা।

বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক প্রিয়াঙ্কা রানী নাথ ও তুলতুল আক্তার বলেন, ২০১৮ সালে তাঁরা দুই বছরের চুক্তিতে মাসিক ৫ হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ পেয়েছিলেন।  বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শিশুদের পাঠদান চলে। তাঁরা জানান, ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে তাঁদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না। ইউএনওকে বিষয়টি কয়েকবার জানিয়েছেন। তিনি ছয় মাসের বেতনের ব্যবস্থা করলেও তাঁদের বকেয়া ছয় মাসের বেতন দেননি। সে কারণে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে পদত্যাগ করেছেন। বেতন  ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হলে তাঁরা বিদ্যালয়ে পাঠদানে ফিরে আসবেন।

সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুচ্ছাফা বলেন, ত্রিপুরাপাড়া বিদ্যালয়ে ৬০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও চলতি বছর তাঁর কার্যালয় থেকে ৭২ সেট বই দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ত্রিপুরাপাড়ার শিশুরা যেন লিখতে ও পড়তে পারে, সে লক্ষ্যে সরকারি একটি প্রকল্পের আওতায় এই প্রাক-প্রাইমারি স্কুলটি স্থাপন করা হয়েছিল। করোনাকালে প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষকদের বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। তার পরও ছয় মাসের বকেয়া বেতন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেতন কম হওয়ায় তাঁরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে স্কুলটি চালু রাখা হবে।