- সারাদেশ
- বিনামূল্যের হাটে ব্যাগ ভর্তি সদাই
বিনামূল্যের হাটে ব্যাগ ভর্তি সদাই
এগারোটি স্টলে থরে থরে সাজানো নিত্যপণ্য। বিক্রেতা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। ক্রেতা অসহায় মানুষ। বিনামূল্যের হাটে ব্যাগ ভর্তি সদাই নেন শারীরিক প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুকসহ অসহায় ৬ শতাধিক পরিবার। বৃহস্পতিবার ছিন্নমূল মানুষের জন্য বিনামূল্যের এই হাটের আয়োজন করা হয় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়িতে।
আঠারোবাড়ি রায় বাজারের পাশে একটি ফিলিং স্টেশনে রমজানের ফ্রি হাটের আয়োজন করে মুক্তিরবন্ধন ফাউন্ডেশন নামের একটি সামাজিক সংগঠন। ২০১৮ সাল থেকে সংগঠনটি রমজান, ঈদ, বড়দিন ও পূজায় ফ্রি হাটের মাধ্যমে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। বিত্তবানদের সহযোগিতায় সংগঠনটি আঠারোবাড়ি এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে চালাচ্ছে তাদের মানবিক সামাজিক কাজ। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি বন্যপ্রাণী নিয়েও কাজ করে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা।
জানা যায়, বর্তমানে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে রমজান উপলক্ষে অসহায় মানুষদের স্বস্তি দিতে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ৬ শতাধিক অসহায় পরিবার নির্বাচন করে। এদের কারো পা নেই, কারো নেই হাত, কারো দৃষ্টিশক্তি নেই। কেউ বিধবা, কারো স্বামী অসুস্থ। ভিক্ষা করে জীবন চলা মানুষ গুলোর কাছে ব্যাগ ভর্তি সদাই করা স্বপ্নের সমান। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নির্বাচিত অসহায়রা ভিড় করেন নির্ধারিত স্থানে। ১১টি স্টলে নিত্যপণ্য নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন স্বেচ্ছাসেবীরা। স্টল গুলোতে মুড়ি, খেজুর, মাছ, তেল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ, টমেটো, আলু, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া ও লাউ সাজানো ছিল।
বেলা ১২টার দিকে ফ্রি হাটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে আলোচনায় অংশ নেনে অতিথিরা। মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশনের অফিস সেক্রেটারি (এডমিন) হাবিবুল বাসার সুমনের সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মেহেদী হাসান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাফিজ জেসমিন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, আঠারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুবের আলম কবীর রূপক, আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আফজালুর রহমান, ঈশ্বরগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ।
আলোচনা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে অসহায়দের মাঝে শুরু হয় বিতরণ কার্যক্রম। সত্তরোর্ধ্ব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মফিজ উদ্দিন বলেন,'যে সদাই পেয়েছি তা একসঙ্গে কোনদিন কেনার সাধ্য হয়নি। এগুলো দিয়েই রোজার প্রথম কিছুদিন ভালোভাবেই চলবে।'
জাটিয়া ইউনিয়নের পানান গ্রামের ইদ্রিস আলীর স্ত্রী সফুরা খাতুন বলেন, 'আমার দুই মাইয়ার বিয়া হয়ে গেছে বহু বছর আগে। আমার জামাই ও আমি দুজনে অসুস্থ। জামাই ঘরে পড়া। এই জিনিসগুলো দিয়ে কয়ডা দিন ভালোই চলবো।'
মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশনের মাল্টিমিডিয়া ম্যানেজার আতিকুর রহমান সোহাগ বলেন, রমজান মাসে অন্তত তিনটি ফ্রি হাট করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। রমজান ছাড়াও ঈদ, পূজা, বড়দিনে এ ধরনের কার্যক্রম করা হয়। এ কার্যক্রম দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। দাতারা যদি এগিয়ে আসে তাহলে এ ধরনের কার্যক্রম আরও ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
সংগঠনটির ভলান্টিয়ার কো-অর্ডিনেটর আজহারুল ইসলাম পলাশ বলেন, অসহায় মানুষের পাশে থাকার প্রত্যয় নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে আমাদের কার্যক্রম চলছে।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, সরকারের পাশাপাশি তৃণমূল মানুষের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সরকারে পক্ষ থেকে এ ধরণের কার্যক্রমে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা থাকবে।
মন্তব্য করুন