ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

‘সব শেষ হয়ে গেছে, কী নিয়ে বাঁচব’

‘সব শেষ হয়ে গেছে, কী নিয়ে  বাঁচব’

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৩ | ১৯:৪১

বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কারও জানা নেই। কথা বলার সাহস হচ্ছিল না কারও। বিলাপের সুরে বলছিলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। এখন কী নিয়ে বাঁচব?’

গতকাল বৃহস্পতিবার পটুয়াখালীর বাউফলে ছুরিকাঘাতে স্কুলছাত্র নাফিজ হাওলাদারের বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। নাফিজের বাবা বাবুল হাওলাদার এভাবেই বিলাপ করছিলেন। একই চিত্র ছিল নিহত আরেক শিক্ষার্থী মারুফ আনসারীর বাড়িতেও। এ দুই ছাত্রকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। শুধু দুই ছাত্রের বাড়িতেই নয়, পুরো এলাকায় চলছে শোকের মাতম। শোকাহত সহপাঠীরাও। জড়িতদের গ্রেপ্তার চেয়ে গতকাল সূর্যমনি ইউনিয়নের ইন্দ্রকুল বিদ্যালয়ের মাঠ ও সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা।

বিক্ষোভকালে সহপাঠী দশম শ্রেণির রাবেয়া বসরী, মারুফা আক্তার, রুদ্র মোহাম্মদ, আসাদুল ইসলাম ও সাকিব সমকালের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তারা বলে, একসঙ্গে পড়ি। একসঙ্গে আসা-যাওয়া করি। আমরা সবাই ভাইবোন। কী করে ভাই হয়ে, ভাইয়ের বুকে ছুরি মারলি! তোদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। শিক্ষার্থীরা জানায়, ন্যায় বিচারের দাবিতে তারা অব্যাহতভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান, সহকারী শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ এবং অভিভাবক আনিচুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববিরোধের জেরে বুধবার বিকেলে দশম শ্রেণির ছাত্র নিয়াজ মোস্তফা আনসারীর ছেলে মারুফ আনসারী ও বাবুল হাওলাদারের ছেলে নাফিজ হাওলাদারকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ইন্দ্রকুল বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান কাজী, সৈকত, হাসিবুল কাজী, নাঈম (১) ও নাঈম (২) স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে এ হামলা চালায়। তাদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয় মারুফ ও নাফিজ। পরে সন্ধ্যায় এ দু’জন হাসপাতালে মারা যায়। এ ঘটনায় আহত সিয়াম সেরে উঠছে।

নিহত মারুফ ও নাফিজ দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। তাদের মৃত্যুতে পুরো উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এলাকাবাসী হত্যায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করছেন। তারা মনে করেন, বয়সের অজুহাতে জড়িতদের অব্যাহতি দেওয়া হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে। স্থানীয় সমাজসেবক গোলাম হোসেন শিকদার বলেন, দেশে কিশোর অপরাধের প্রচলিত আইনে ফাঁকফোকর আছে। এর সংশোধনের মাধ্যমে শাস্তি কঠোর করতে হবে। নয়তো কিশোর অপরাধ ঠেকানো যাবে না।
দশম শ্রেণির আসাদুল ও মারুফা জানায়, মারুফ ও নাফিজ খুব মেধাবী ছিল। তাদের গণিত ও বিজ্ঞানের নোট নিয়ে সহায়তা করত।


নিহত নাফিজের বাবা নিয়াজ মোস্তফা আনসারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘নাফিজ আর বলবে না– বাবা নামাজ পড়ে দোয়া কর, আমি যেন মানুষ হতে পারি। আমার সঙ্গে আর কে কথা বলবে? সন্তান হত্যাকারীদের শাস্তি চাই।’
এ বিষয়ে বাউফল থানার ওসি আল মামুন বলেন, হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ময়নাতদন্ত শেষে নাফিজ ও মারুফের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আরও পড়ুন

×