ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

গ্যাসলাইন, শর্টসার্কিট নয় সন্দেহে অন্য কারণ

গ্যাসলাইন, শর্টসার্কিট নয় সন্দেহে অন্য কারণ

সমকাল প্রতিবেদক, ঢাকা ও নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৩ | ২১:৪৭

নোয়াখালীতে মসজিদের বিস্ফোরণস্থলে কোনো গ্যাসলাইন ছিল না। এমনকি সেখানে শর্টসার্কিটের আলামত মেলেনি। প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থলের আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর র‍্যাবের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ঘটনাস্থলে ছোট আকারের বিস্ফোরণ ঘটেছে। বারুদ বা ককটেল জাতীয় কিছুর কারণে এটা হতে পারে। বড় বিস্ফোরণ হলে ঘটনাস্থলে যে ধরনের আলামত থাকে, মসজিদে তা পাওয়া যায়নি। মসজিদ কমিটিকে হেনস্তা করতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড হতে পারে। এটি স্বাভাবিক অগ্নিকাণ্ড ছিল না। মেঝের টাইলস ভেঙে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। কোনো ধরনের গর্ত তৈরি হয়নি।  
র‍্যাবের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের উপপরিচালক মেজর মশিউর রহমান বলেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ মডেল মসজিদে কোনো গ্যাসের লাইন ছিল না। অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে একটি কক্ষের দরজা-জানালার গ্লাস ও সিলিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনা দেখে বোঝা গেছে, এটা স্বাভাবিক অগ্নিকাণ্ড নয়। র‍্যাবের পাশাপাশি অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা ও ফরেনসিক ইউনিট কাজ করছে। বুধবার রাতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদের বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে বম্ব ডিসপোজাল টিম, সিআইডি, পিবিআই, ফরেনসিক ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার টিম কাজ করছে। অত্যাধুনিক এক্সপ্রোসিব প্রোর্টেবল ট্রেস, ভ্যাপার ট্রেসের জন্য ভ্যাপার ডিটেকশন, অত্যাধুনিক ফিঙ্গার প্রিন্ট ক্যাপচারিং এবং স্কেনিং সিস্টেম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। আলামতগুলো পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড কিংবা নাশকতামূলক কাজের ইন্ধন আছে কিনা, তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।  বুধবার রাত ৮টার দিকে র‍্যাব সদর দপ্তর থেকে মেজর মশিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল বেগমগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদের বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন শেষে রাতেই ঢাকা ফিরে যায়।

এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার সন্দেহে মসজিদের দায়িত্বে থাকা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার আবদুল হালিমকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তার ব্যাগ থেকেই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আবদুল হালিমের দাবি, ব্যাগে বডি স্প্রের বোতল ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। গ্রেপ্তার আবদুল হালিমের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলায়।

অন্যদিকে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না মাহমুদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বডি স্প্রের একটি বোতলকেও তারা সন্দেহের তালিকায় রাখছে।

তদন্ত কমিটির অপর চার সদস্য হলেন– ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক আবুল কাশেম, বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াসির আরাফাত, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বুধবার রাতে র‍্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা অত্যাধুনিক স্ক্যানার যন্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, বিস্ফোরণস্থলে কোনো বিস্ফোরকের উপস্থিতি মেলেনি। তবে বোমা নিষ্ক্রিয়কারাী দল ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে। ঢাকায় নিয়ে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর একটি প্রতিবেদন দেবে।  

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার আবদুল হালিম দাবি করেন, তাঁর ব্যাগের ভেতর বডি স্প্রের একটি বোতল ছিল। এ ছাড়া অন্য কিছু ব্যাগে ছিল না। বডি স্প্রের বোতল থেকে এ ধরনের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য ফিল্ড সুপারভাইজারকে সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভাধীন আলীপুর মহল্লায় সোনাপুর-চৌমুহনী আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশের বেগমগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদের দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ওই কক্ষটির তিনটি জানালা, দুটি দরজা ও সিলিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় কক্ষে কেউ না থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। 

আরও পড়ুন

×